বাংলাদেশের বৃহত্তম হাওড় এবং প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় পর্যটন গন্তব্য হাকালুকি হাওড়(hakaluki haor)। এটি মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে রয়েছে। অসংখ্য ছোট-বড় বিল, নদী, জলাভূমি, সবুজ বন, এবং হাজারো পরিযায়ী পাখির মিলনমেলা হাওড়টিকে পর্যটকদের জন্য স্বর্গীয় সৌন্দর্যের এক অনন্য ঠিকানা করে তুলেছে।হাকালুকি হাওড় সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলার ৫টি উপজেলার (কুলাউড়া, বড়লেখা, জুড়ী, ফেঞ্চুগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জ) মধ্যে বিস্তৃত।মোট এলাকা: প্রায় ১৮,১১৫ হেক্টর।বর্ষাকালে জলমগ্ন এলাকা: প্রায় ২০,৪০০ হেক্টর।উপহাওড় সংখ্যা: প্রায় ২৬০টি ছোট-বড় বিল রয়েছে।সংযোগ: কুশিয়ারা, জুড়ী ও অন্যান্য ছোট নদীর মাধ্যমে প্রধান নদীগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত।

হাকালুকি হাওড়ের আকর্ষণঃ
১. প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যঃবর্ষায় হাকালুকি হাওড় রূপ নেয় এক বিশাল সমুদ্রের মতো, যেখানে শুধু নৌকা বা ছোট ট্রলারই চলাচল করতে পারে। আবার শীতকালে পানির পরিমাণ কমে গেলে বিস্তীর্ণ সবুজ ভূমি দেখা যায়, যা একেবারে অন্য এক দৃশ্যের জন্ম দেয়।বর্ষাকালের রূপ: সবুজের বুক চিরে জলে চলা নৌকার আনন্দ অন্যরকম।শীতকালের রূপ: শুকনো মৌসুমে বিলে নানা ধরনের শস্যক্ষেত্র ও বিচিত্র পাখির সমাহার দেখা যায়।

২। পরিযায়ী পাখির স্বর্গরাজ্যঃ
হাকালুকি হাওড় শীতকালে অসংখ্য পরিযায়ী পাখির আবাসস্থলে পরিণত হয়। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা এসব পাখি পর্যটকদের জন্য এক অনন্য দৃশ্য উপহার দেয়।সরালি হাঁস, বালি হাঁস, গার্গেনি, চখাচখি, পানকৌড়ি, ডাহুকসহ নানা রঙের পাখির ঝাঁক পর্যটকদের মুগ্ধ করে।ভোরবেলা বা সন্ধ্যার সময় পাখিদের ঝাঁকে ঝাঁকে উড়তে দেখা যায়, যা এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।

৩। নৌকা ভ্রমণের আনন্দঃ
হাওড়ের সৌন্দর্য পুরোপুরি উপভোগ করতে নৌকা ভ্রমণের বিকল্প নেই। পর্যটকরা সাধারণত নৌকা, ট্রলার বা স্পিডবোট নিয়ে হাওড়ের বিভিন্ন বিল ও দ্বীপসমূহ ঘুরে দেখতে পারেন।সকাল ও বিকেলে নৌকা ভ্রমণ: কুয়াশায় ঢাকা হাওড়ের মাঝ দিয়ে ধীরে ধীরে নৌকা ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়া সত্যিই মনোমুগ্ধকর।সন্ধ্যার সূর্যাস্ত: পানির মধ্যে সূর্যের প্রতিচ্ছবি পর্যটকদের হৃদয়ে এক শান্তির অনুভূতি এনে দেয়।

৪। গ্রামের জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতিঃ
হাওড়ের আশপাশের গ্রামগুলোর জীবনযাত্রাও পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয়। এখানকার মানুষজন মাছ ধরা, গবাদি পশু পালন ও কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত।গ্রামের সহজ-সরল মানুষের আতিথেয়তা পর্যটকদের মন জয় করে নেয়।স্থানীয়দের তৈরি দেশীয় খাবার যেমন পানিভরা পিঠা, শুঁটকি মাছ, হাঁসের মাংস পর্যটকদের রসনাবিলাস বাড়িয়ে দেয়।

৫. ফটোগ্রাফির স্বর্গরাজ্যঃ
হাকালুকি হাওড় প্রকৃতিপ্রেমী ও ফটোগ্রাফারদের জন্য এক আদর্শ স্থান।শীতকালে পাখির ঝাঁক ।বর্ষাকালে নীল আকাশের প্রতিফলিত জলরাশি।গ্রামের মানুষ ও তাদের জীবনযাত্রা ।নৌকা ও সূর্যাস্তের দৃশ্য ।সবুজ ধানক্ষেত এবং কুয়াশার চাদরে ঢাকা সকালের দৃশ্য
ঢাকা থেকে হাকালুকি হাওড় যাওয়ার উপায়ঃ
১।ঢাকা থেকে: ট্রেনে বা বাসে মৌলভীবাজার বা সিলেট গিয়ে, সেখান থেকে অটোরিকশা বা গাড়িতে হাকালুকি হাওড়ে পৌঁছানো যায়।
২।সরাসরি গন্তব্য: বড়লেখা বা কুলাউড়া থেকে সহজেই নৌকা বা ট্রলারের ব্যবস্থা করা যায়।
হাকালুকি হাওড় ঘুরতে গেলে কোথায় থাকবেনঃ
১।মৌলভীবাজার ও সিলেট শহরে পর্যটকদের থাকার জন্য বিভিন্ন হোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে।
২।স্থানীয় গ্রামে হোমস্টে বা অতিথিশালা থাকার সুযোগ পাওয়া যেতে পারে।
মৌলভীবাজারের হোটেলসমূহঃ
হোটেলের নাম | অবস্থান | বিবরণ |
---|---|---|
রেস্টইন হোটেল & রেস্টুরেন্ট | মৌলভীবাজার সদর | মৌলভীবাজার সদরে অবস্থিত এই হোটেলটি আরামদায়ক কক্ষ ও রেস্টুরেন্ট সুবিধা প্রদান করে। |
রাঙ্গাউটি রিসোর্ট | মৌলভীবাজার সদর | প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা এই রিসোর্টটি পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে অবকাশ যাপনের জন্য উপযোগী। |
গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট & গলফ | শ্রীমঙ্গল | পাঁচ তারকা মানের এই রিসোর্টটি চা বাগানের মাঝে অবস্থিত এবং বিলাসবহুল সুবিধা প্রদান করে। |
সিলেটের হোটেলসমূহ:
হোটেলের নাম | অবস্থান | বিবরণ |
---|---|---|
হোটেল নূরজাহান গ্র্যান্ড | সিলেট শহর | সিলেট শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত এই হোটেলটি আধুনিক সুবিধা ও আরামদায়ক কক্ষ প্রদান করে। |
হোটেল স্টার প্যাসিফিক | সিলেট শহর | সুইমিং পুল ও ফিটনেস সেন্টারসহ এই হোটেলটি বিলাসবহুল থাকার ব্যবস্থা প্রদান করে। |
নির্বাণা ইন | সিলেট শহর | শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত এই হোটেলটি ব্যবসায়িক ও পর্যটকদের জন্য উপযোগী। |
হাকালুকি হাওড় ভ্রমণের সেরা সময়ঃ
১।বর্ষাকাল (জুন-সেপ্টেম্বর): নৌকা ভ্রমণের জন্য আদর্শ।
২।শীতকাল (নভেম্বর-ফেব্রুয়ারি): পরিযায়ী পাখি দেখার জন্য উপযুক্ত সময়।
হাকালুকি হাওড় ঘুরতে আসলে, ডিবির হাওর ঘুরে আসতে পারেন।
[…] জৈন্তাপুর ও তামাবিল এলাকার রিসোর্টসমূহ: […]