boalia waterfall
সৌন্দর্যে ভরপুর বোয়ালিয়া ট্রেইল
বাংলাদেশের এক অপার সৌন্দর্যে ভরপুর বোয়ালিয়া ট্রেইল(boalia waterfall)একটি ট্রেকিং গন্তব্য, যা প্রকৃতিপ্রেমী ও অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের কাছে ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এটি চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত একটি ট্রেইল, যা মূলত রাউজান উপজেলার ভিতরে বা পার্শ্ববর্তী পাহাড়ি এলাকায় বিস্তৃত।বোয়ালিয়া ট্রেইলটি চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত। চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ৪৫-৫০ কিলোমিটার দূরে।

বোয়ালিয়া ট্রেইলের আকর্ষণীয় দিকগুলোঃ
১। পাহাড় ও ঢালু পথের নান্দনিকতা:
বোয়ালিয়া ট্রেইলে হাঁটতে হাঁটতে চোখে পড়ে উঁচু-নিচু ঢালু পথ, যা ঘন সবুজে আবৃত। পাহাড়ের ঢালে সূর্যের আলো পড়লে প্রকৃতি যেন আলাদা এক আবেশে জেগে ওঠে।
২। ঝিরিপথের কলকল ধ্বনি:
পাহাড়ের বুক চিরে বয়ে চলা ছোট ছোট ঝিরি বা ঝরণাধারা সারাক্ষণ একটা শান্তিময় শব্দ তৈরি করে। এই ঝিরিপথ ধরে হাঁটার সময় পায়ের নিচে ঠাণ্ডা পানি আর চারপাশের সবুজ আপনাকে অন্য জগতে নিয়ে যাবে।
৩। ঘন জঙ্গল ও বুনো গাছপালা:
ট্রেইলের দুই পাশে ঘন জঙ্গল, যেখানে প্রচুর জাতের গাছপালা, লতা-পাতা এবং বনজ উদ্ভিদ দেখা যায়। কিছু কিছু এলাকায় সূর্যের আলো মাটিতে পৌঁছায় না বললেই চলে।
৪।বন্যপ্রাণী ও পাখির কলতান:
এই অঞ্চলে নানা ধরনের বন্যপ্রাণী ও পাখির বিচরণ লক্ষ্য করা যায়। পাহাড়ি পাখিরা সকালের দিকে আপনাকে তাদের মিষ্টি সুরে স্বাগত জানাবে।
৫। বুনো ফুল ও ঔষধি গাছ:
ট্রেইল ধরে হেঁটে গেলে চোখে পড়বে অজস্র বুনো ফুল, যেগুলো প্রাকৃতিকভাবে জন্মায়। বর্ষাকালে রঙিন ফুলের বাহারে ট্রেইল হয়ে ওঠে আরও রঙিন।
৬। আকাশ ও পাহাড়ের মিলনরেখা:
ট্রেইলের উচ্চতর অংশ থেকে তাকালে আপনি দেখতে পাবেন আকাশ ও পাহাড় যেন একসাথে মিশে গেছে। মেঘের খেলা, হালকা কুয়াশা – সব কিছু মিলে সৃষ্টি করে এক স্বর্গীয় পরিবেশ।
৭। নিভৃতে একান্ত সময় কাটানোর সুযোগ:
এখানে কোনো কোলাহল নেই, কেবল প্রকৃতি আর আপনি। যারা প্রকৃতির মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে চান, তাদের জন্য বোয়ালিয়া ট্রেইল স্বর্গস্বরূপ।

বোয়ালিয়া ট্রেইলে যাওয়ার উপায়:
১।চট্টগ্রাম শহর থেকে রাউজান পর্যন্ত বাস/সিএনজি/প্রাইভেট কারে যেতে হবে।
২।সেখান থেকে স্থানীয় গাইড নিয়ে ট্রেইল শুরু করা যায়।
৩।কিছু পর্যটক ট্রেইলটি বোয়ালিয়া থেকে শুরুর করে দীঘিরপাড়া বা গহিরা পর্যন্ত ট্রেক করেন।

বোয়ালিয়া ট্রেইলের খাওয়ার ব্যবস্থাঃ
১. নিজস্ব খাবার সঙ্গে নিয়ে যাওয়া:
হালকা শুকনো খাবার: বিস্কুট, চকলেট, খেজুর, বাদাম, ব্রেড, কলা ইত্যাদি।
পানির বোতল: অন্তত ২ লিটার বিশুদ্ধ পানি সঙ্গে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়।
লাঞ্চবক্স: চাইলে ঘর থেকে রান্না করা ভাত-মুরগি বা খিচুড়ি সঙ্গে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে।
২. লোকাল দোকান বা বাজার:
ট্রেইলের শুরুর দিক বা আশেপাশের গ্রামে কিছু ছোট চায়ের দোকান বা স্থানীয় বাজার পাওয়া যেতে পারে।তবে সেখানকার খাবার সহজ-সরল, যেমন – ডাল-ভাত, ভর্তা, ডিম বা আলুর তরকারি ইত্যাদি।খাবারের মান ও স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে খুব একটা আশা না করাই ভালো।
৩. ক্যাম্পিং করলে রান্নার ব্যবস্থা:
যদি আপনি গ্রুপে যান এবং ক্যাম্পিং করার পরিকল্পনা থাকে:গ্যাস স্টোভ বা চুলা, প্রয়োজনীয় কুকিং গিয়ার ও কাঁচা মালামাল নিয়ে যেতে হবে।স্থানীয় গাইডদের সাহায্যে রান্না করা যায় কখনো কখনো, তবে সেটাও আগে থেকে ঠিক করে নিতে হয়।
চট্টগ্রাম শহরের বিখ্যাত খাবারঃ
মেজবানিঃমাংসজামালখান, লালখান বাজার, চেরাগি পাহাড়
কালা:ভুনাআফছার হোটেল, হানিফ হোটেল
চা: আগ্রাবাদ, পাহাড়তলী ও নিউমার্কেট এলাকার টং দোকান
তেহারি: চকবাজার, রেল স্টেশন রোড
মিষ্টি: কোতোয়ালী, লালদীঘি, চকবাজার

বোয়ালিয়া ট্রেইলের আশেপাশে থাকার ব্যবস্থা:
১। স্থানীয় গ্রামে হোম-স্টে বা আতিথেয়তা:
আশেপাশের পাহাড়ি গ্রামে কিছু পরিবার পর্যটকদের মাঝে সময় কাটাতে দেয়—যাকে বলে হোম-স্টে।এসব জায়গায় আপনি সাধারণ মানের ঘর, দেশি খাবার ও স্থানীয় আতিথেয়তা উপভোগ করতে পারেন।তবে এটি নিশ্চিত করতে হলে আগে থেকে স্থানীয় গাইড বা যোগাযোগসূত্র থাকতে হবে।
২। নিকটবর্তী শহর বা বাজার এলাকায় ছোট গেস্টহাউস:
রাউজান উপজেলা সদর, দীঘিরপাড়া বাজার, অথবা আশেপাশের এলাকায় কিছু সাধারণ মানের লজিং হাউস/বোর্ডিং থাকতে পারে।এসবে সাধারণত ফ্যান রুম, সাদামাটা বিছানা, এবং বেসিক টয়লেট সুবিধা পাওয়া যায়।
৩।ক্যাম্পিং (নিজস্ব উদ্যোগে):
যদি আপনি অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় হন, তাহলে ট্রেইলের নির্দিষ্ট জায়গায় ক্যাম্পিং করতে পারেন এজন্য লাগবে:টেন্ট ,স্লিপিং ব্যাগ ,ইনসেট রিপেলেন্ট ,গাইডের সহায়তা ও স্থানীয় অনুমতি
রাতের পাহাড়ে ক্যাম্পিং এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা হতে পারে, তবে নিরাপত্তা ও আবহাওয়া বিবেচনায় প্রস্তুতি জরুরি।
৪।চট্টগ্রাম শহরে থাকা (ডে ট্রিপের পরিকল্পনা):
অনেকে বোয়ালিয়া ট্রেইল একদিনে ঘুরে আবার চট্টগ্রাম শহরে ফিরে যান।
শহরে ৫০০–৫০০০ টাকার মধ্যে বিভিন্ন মানের হোটেল, রিসোর্ট এবং গেস্ট হাউস পাওয়া যায়।
যারা আরামদায়ক এবং নিরাপদ পরিবেশ চান, তাদের জন্য এটি ভালো অপশন।

বোয়ালিয়া ট্রেইলে ভ্রমনের সময় সতর্কতা ও পরামর্শ:
১।স্লিপার বা স্যান্ডেল পরা যাবে না; ভালো গ্রিপযুক্ত ট্রেকিং জুতা পরা আবশ্যক।
২।ইনসেক্ট রেপেলেন্ট, পানির বোতল, হালকা খাবার, মেডিকেল কিট সাথে রাখুন।
৩।গাইড ছাড়া যাওয়া উচিত নয়, কারণ ট্রেইলে পথ হারানোর সম্ভাবনা থাকে।
৪।পরিবেশ রক্ষা করুন, প্লাস্টিক বা ময়লা ফেলবেন না।
Leave a Reply