freedom museum bhola
ঐতিহ্য সংরক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ভোলার স্বাধীনতা জাদুঘর
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ভোলার স্বাধীনতা জাদুঘর। ভোলা জেলার বাংলাবাজারে অবস্থিত এই জাদুঘরটি আধুনিক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত স্বাধীনতা জাদুঘর একটি তিনতলা ভবন, যা ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ উদ্বোধন করেন ।মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও ৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানের মহানায়ক তোফায়েল আহমেদের উদ্যোগে এই জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল নতুন প্রজন্মকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে অবহিত করা ।

স্থাপত্য ও গ্যালারির বিবরণঃ
জাদুঘরটি তিনটি তলায় বিভক্ত, প্রতিটি তলায় রয়েছে বিভিন্ন ঐতিহাসিক প্রদর্শনী:
১।প্রথম তলা: এখানে রয়েছে ইতিহাস-ঐতিহ্য, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, ১৯৪৭-এর দেশভাগ ও ভাষা আন্দোলনের দুর্লভ ছবি ও তথ্য। এছাড়া রয়েছে গ্রন্থাগার, গবেষণাগার এবং মাল্টিমিডিয়া ডিসপ্লে হলরুম ।
২।দ্বিতীয় তলা: এখানে ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধের আগ পর্যন্ত ইতিহাসের মুহূর্তগুলোর চিত্রকল্প প্রদর্শিত হয়
৩।তৃতীয় তলা: এখানে রয়েছে ১৯৫৮-এর আন্দোলন, পাকিস্তানের সামরিক শাসন, ১৯৬৬-এর আন্দোলন, ১৯৬৯-এর গণআন্দোলন, ১৯৭০-এর নির্বাচন, ৭ মার্চের ভাষণ, ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন সময়ের দুর্লভ আলোকচিত্র। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর সকল ভাষণের অডিও ও ভিডিওর ডিজিটাল প্রদর্শনীও রয়েছে

স্বাধীনতা জাদুঘরে বিশেষ প্রদর্শনীঃ
১।বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের আলোকচিত্র।
২।জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুর্লভ আলোকচিত্র ও ভাষণের অডিও-ভিডিও।
৩।তোফায়েল আহমেদের সংগ্রামী জীবনের আলোকচিত্র।
৪।বাঙালির লোকজ ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি।
দর্শনার্থীদের জন্য সময়সূচিঃ
জাদুঘরটি বৃহস্পতিবার ব্যতীত প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে
স্বাধীনতা জাদুঘরটির অবস্থান ও সংযুক্ত প্রতিষ্ঠান
জাদুঘরটি ভোলা শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দক্ষিণে ভোলা-চরফ্যাশন সড়কের পাশে বাংলাবাজার এলাকায় অবস্থিত। এখানে ফাতেমা খানম কমপ্লেক্সের অংশ হিসেবে ফাতেমা খানম মসজিদ, বৃদ্ধাশ্রম, কলেজ, বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠান রয়েছে ।

ঢাকা থেকে ভোলা যাওয়ার উপায়ঃ
১।ঢাকা → বরিশাল → ভোলা
গাবতলী, সায়েদাবাদ বা কল্যাণপুর থেকে সরাসরি বরিশালগামী এসি/নন-এসি বাস পাওয়া যায় (যেমন: Hanif, Eagle, Sakura, Desh Travels)।লঞ্চেও যেতে পারেন সদরঘাট থেকে বরিশালের উদ্দেশ্যে।বরিশাল থেকে ভোলা সদর পর্যন্ত মিনিবাস বা লোকাল বাসে যেতে পারবেন।মাঝপথে লালমোহন বা ইলিশা ফেরিঘাটে নদী পার হতে হয়।
২।ঢাকা → ভোলা
ঢাকা থেকে সরাসরি ভোলার জন্য বাস পাওয়া যায়, তবে এটি নদীপথ অতিক্রম করে ফেরি চেঞ্জ করতে হয়।সময় লাগে প্রায় ১০-১২ ঘণ্টা।প্রতিদিন সদরঘাট থেকে ভোলার উদ্দেশ্যে নৌপথে লঞ্চ ছেড়ে যায়।এটি রাতের যাত্রা এবং অনেক আরামদায়ক। সময় লাগে প্রায় ৭-৮ ঘণ্টা।
ভোলা শহর থেকে চরফ্যাশন যাওয়ার উপায়ঃ
ভোলা শহর থেকে চরফ্যাশন (যেখানে জ্যাকব টাওয়ার অবস্থিত) যেতে লোকাল বাস, সিএনজি বা মাইক্রোবাসে যেতে পারবেন।চরফ্যাশন পৌঁছাতে সময় লাগবে প্রায় ২-৩ ঘণ্টা, দূরত্ব প্রায় ৭০ কিমি।
ভোলার বিখ্যাত খাবারঃ
নদীর তাজা মাছের রান্না।ভোলার গ্রামীণ অঞ্চলে ছাগলের দুধ থেকে বানানো ঘন ক্ষীর বা রাবড়ি বিখ্যাত। এটা খুবই স্বাস্থ্যকর আর ঘন মিষ্টি স্বাদের হয়।স্থানীয় অনুষ্ঠানে ভোলার ঐতিহ্যবাহী হাঁড়ি মাংস (গরুর মাংস রান্না করা হয় মাটির হাঁড়িতে, দেশি মসলা দিয়ে) বেশ জনপ্রিয়।ভোলার মিষ্টি ও দই।ঈদ বা পারিবারিক অনুষ্ঠানে খাসির রেজালা বা ঝাল চড়ুই ভুনা খুব পছন্দের আইটেম।
চরফ্যাশনের জনপ্রিয় হোটেল ও গেস্ট হাউসঃ
১।Hotel Green Valley
অবস্থান: চরফ্যাশন শহর এলাকায় ।সুবিধা: ক্লিন রুম, রুম সার্ভিস, ফ্যামিলি ফ্রেন্ডলি পরিবেশ
ভাড়া: ৮০০–১৫০০ টাকা
২।Hotel Shahi Residential
অবস্থান: চরফ্যাশন বাজার সংলগ্ন ।বৈশিষ্ট্য: AC/NON-AC রুম, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ
ভাড়া: ১০০০–১৮০০ টাকা
৩।চরফ্যাশন উপজেলা গেস্ট হাউস
এটি সাধারণত সরকারি বা বিশেষ অনুমতিপ্রাপ্ত অতিথিদের জন্য, তবে আগে থেকে যোগাযোগ করলে নির্ধারিত ফি দিয়ে থাকা সম্ভব হতে পারে।
ভোলার স্বাধীনতা জাদুঘরটি পরিদর্শন করতে আসলে ,জ্যাকব টাওয়ার ঘুরে আসুন।
Leave a Reply