বরিশাল

বরিশালের ঐতিহাসিক বেলস পার্ক

bells park

বরিশালের ঐতিহাসিক বেলস পার্ক

বরিশালের বেলস পার্ক , যা কীর্তনখোলা নদীর তীরে অবস্থিত। এটি মূলত ব্রিটিশ শাসনামলে নির্মিত হয় এবং এর নামকরণ করা হয়েছিল তৎকালীন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হেনরি এন্ড্রু বেল এর নামে, যিনি ১৮৯৩ সালে বরিশাল শহরের উন্নয়নের জন্য অবদান রেখেছিলেন।বেলস পার্কটি তৎকালীন সময়ে বরিশালের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিনোদনকেন্দ্র ছিল এবং এখনো সেখানকার মানুষের কাছে একটি প্রিয় স্থান। পার্কটিতে বিভিন্ন জাতের গাছ, খোলা মাঠ, হাঁটার পথ, এবং নদীর তীর ঘেঁষে বসার জায়গা রয়েছে, যা দর্শনার্থীদের মনোমুগ্ধ করে। বর্তমানে,বরিশালের ঐতিহাসিক বেলস পার্ককে বরিশালের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে উন্নত করা হয়েছে। স্থানীয় মানুষ থেকে শুরু করে দূর-দূরান্তের ভ্রমণকারীরা এই পার্কে আসে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে এবং ইতিহাসের ছোঁয়া অনুভব করতে।

বেলস পার্ক উদ্যানের  প্রাকৃতিক সৌন্দর্যঃ

বরিশালের ঐতিহাসিক বেলস পার্ক, যা বর্তমানে বঙ্গবন্ধু উদ্যান নামে পরিচিত, তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বরিশালের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান। ১৮৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই পার্কটি প্রাকৃতিক এবং ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করে আসছে।পার্কটি প্রশস্ত সবুজ উদ্যান, ফুলের বাগান এবং নান্দনিকভাবে সাজানো পথের সমন্বয়ে গঠিত, যা দর্শনার্থীদের জন্য একটি শান্তিপূর্ণ এবং মনোরম পরিবেশ সৃষ্টি করে। এছাড়া পার্কের প্রতিটি কোণে রয়েছে বসার স্থান, যা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য উপযোগী। সন্ধ্যার সময় আলোকসজ্জা পার্কের সৌন্দর্যকে আরো উজ্জ্বল করে তোলে। এই সবুজ উদ্যান, হাঁটার পথ এবং ফুলের বাগান একে বরিশালের একটি অন্যতম প্রধান বিনোদনকেন্দ্রে পরিণত করেছে।

bells park

বিনোদন সুবিধাঃ

বরিশালের বেলস পার্ক, বা বর্তমানের বঙ্গবন্ধু উদ্যান, একটি বহুমুখী বিনোদনকেন্দ্র যা স্থানীয় বাসিন্দা এবং পর্যটকদের জন্য জনপ্রিয়।এখানে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সঙ্গীতানুষ্ঠান, এবং সামাজিক কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়।পার্কের চারপাশে প্রশস্ত হাঁটার পথ এবং সবুজ গাছপালায় ঘেরা প্রাঙ্গণ রয়েছে, যেখানে ভ্রমণকারীরা আরাম করে হাঁটতে বা বসতে পারেন। সন্ধ্যার সময় আলোকসজ্জা পার্কের সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে তোলে। বিশেষ করে জলাধারের চারপাশে আলোকসজ্জা পার্কটিকে মনোমুগ্ধকর করে তুলেপার্কে বিভিন্ন বসার স্থান এবং বাচ্চাদের খেলার জায়গা রয়েছে, যা পারিবারিক বিনোদনের জন্য উপযোগী।এইসব সুবিধা ছাড়াও বেলস পার্ক বা বঙ্গবন্ধু উদ্যান বরিশাল শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত হওয়ায় এটি সকলের জন্য সহজে প্রবেশযোগ্য একটি জনপ্রিয় বিনোদনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

bells park

সাংস্কৃতিক কার্যক্রমঃ

এখানে উন্মুক্ত মঞ্চ রয়েছে যেখানে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কনসার্ট এবং প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। এটি স্থানীয় সংস্কৃতি এবং কৃষ্টির সাথে পরিচিত হওয়ার একটি চমৎকার স্থান। পার্কটি শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এবং এটি ঐতিহ্যবাহী নানা কার্যক্রম ও অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য প্রসিদ্ধ। এখানে গান, নাচ, নাটক, এবং অন্যান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, যা বরিশালবাসীর জন্য বিনোদন ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অভিজ্ঞতা সরবরাহ করে। বিশেষ দিনগুলোতে যেমন স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, এবং নববর্ষে এই পার্কটি অত্যন্ত ব্যস্ত হয়ে ওঠে।

bells park

পরিবেশ সংরক্ষণঃ

বেলস পার্ক, বরিশালে পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত। পার্কটি তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং গাছপালায় ভরপুর, যা শহরের জন্য একটি সবুজ ফুসফুসের মতো কাজ করে। স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ সংরক্ষণ সংস্থাগুলো এখানে নিয়মিতভাবে পরিচ্ছন্নতা অভিযান, গাছ লাগানোর কার্যক্রম এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে কাজ করে। সাধারণ মানুষও এই উদ্যোগে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে। এছাড়া, পার্কে প্লাস্টিক বর্জ্যের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং দর্শনার্থীদের পরিবেশ সচেতন হতে উদ্বুদ্ধ করা হয়, যাতে পার্কটির প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় থাকে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এটি আরও সৌন্দর্যমণ্ডিত হয়।

 

bells park

ঢাকা থেকে  বেলস পার্কে যাওয়ার উপায়ঃ

ঢাকা থেকে বঙ্গবন্ধু উদ্যান অথবা বেলস পার্ক, বরিশালে যাতায়াতের জন্য কয়েকটি প্রধান পথ রয়েছে। আপনি বাস, লঞ্চ বা বিমান ব্যবহার করে যাতায়াত করতে পারেন।

১. বাসের মাধ্যমেঃ

ঢাকা থেকে সরাসরি বরিশাল পর্যন্ত বেশ কয়েকটি বাস সার্ভিস রয়েছে। আপনি গাবতলী, সায়েদাবাদ বা মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে বাস ধরতে পারেন। নন এসি এবং এসি  বাস সার্ভিস রয়েছে সবসময়।

সাধারণত ৫-৬ ঘণ্টা সময় লাগে (সড়কের অবস্থা এবং ট্রাফিকের উপর  নির্ভর করে)সাকুরা, বিআরটিসি,হানিফ,এনা,গ্রীন লাইন, ইত্যাদি।

২.লঞ্চ সার্ভিসঃ

সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে বিভিন্ন লঞ্চ বরিশালের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। জনপ্রিয় লঞ্চ সার্ভিসগুলির মধ্যে রয়েছে সুন্দরবন, পারাবত, এম ভি প্রিন্স আওলাদ,এডভেঞ্চার ,মানামি,সুরভী ইত্যাদি।

৩. বিমানের মাধ্যমেঃ

ঢাকা থেকে বরিশাল বিমানবন্দরে সরাসরি ফ্লাইট রয়েছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এবং ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স এই রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে।  ফ্লাইটের সময় প্রায় ৪৫-৬০ মিনিট।

bells park

৪. বরিশাল শহর থেকে বেলস পার্কে যাওয়ার উপায়ঃ

বরিশাল শহরে পৌঁছানোর পর, স্থানীয় পরিবহন যেমন রিকশা, অটোরিকশা বা সিএনজি ব্যবহার করে বঙ্গবন্ধু উদ্যান যেতে পারেন। উদ্যানটি শহরের কেন্দ্রীয় এলাকায় অবস্থিত, যা সহজেই যাওয়া যায়।

এই উপায়গুলির মধ্যে আপনার সুবিধা এবং বাজেট অনুযায়ী যে কোনো একটি বেছে নিয়ে ঢাকা থেকে বরিশালে বঙ্গবন্ধু উদ্যান যেতে পারেন।

বরিশালে আসলে কোথায় খাবেনঃ

১।লেক ভিউ রেস্টুরেন্টঃচৌমাথা বাজারের কাছে, লেকের পাশে অবস্থিত। বিদেশি খাবারের জন্য পরিচিত।

২।ভাই ভাই হোটেলঃচৌমাথা লেকের উত্তরে অবস্থিত, যেখানে দুপুরের খাবার জনপ্রিয়। এখানে দেশি খাবারের স্বাদ বেশ ভালো।

৩।খাবার বাড়ি রেস্টুরেন্টঃবরিশালে বিভিন্ন ধরনের খাবার উপভোগের জন্য একটি ভালো স্থান।

৪।তাওয়া রেস্টুরেন্ট-স্থানীয় খাবার যেমন মাছ, ভর্তা, ও ভাতের জন্য বিখ্যাত

জাফরান রেস্টুরেন্ট-বারিশালের অন্যতম জনপ্রিয় রেস্টুরেন্ট, যা চাইনিজ এবং ইন্ডিয়ান খাবারের জন্য প্রসিদ্ধ।

বরিশাল সদরে ভালমানের রসগোল্লা পাওয়া যায়।আবশ্যই নিতাই ও হকের রসগোল্লা খাবেন।

বরিশাল সদরে থাকার ব্যবস্থাঃ

বরিশাল সদরে বেশ কিছু উন্নতমানের হোটেল রয়েছে যেখানে থাকা, খাবার এবং অন্যান্য সুবিধা উপলব্ধ। এখানে কিছু জনপ্রিয় হোটেলের তালিকা:

১।Hotel Grand Park-বেলস পার্ক লেকের পাশে অবস্থিত, এটি আন্তর্জাতিক মানের সুবিধাসম্পন্ন হোটেল। এখানে পার্ক ভিউ সহ বিভিন্ন ধরনের রুম ও সুইট রয়েছে।

২।Hotel Sedona-সদর রোডে অবস্থিত এই হোটেলটি চাইনিজ এবং বাংলাদেশি খাবারের পাশাপাশি ২৩২০ বর্গফুটের কনফারেন্স রুমের সুবিধা দেয়।

৩।Rich Mart Rest House-লঞ্চ ঘাটের কাছে অবস্থিত এই রেস্ট হাউসে আধুনিক সুবিধাসহ সিঙ্গেল থেকে ফ্যামিলি স্যুট পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের রুম পাওয়া যায়।

৪।Hotel Arena-সদর রোডে অবস্থিত হোটেল এ রান্নাঘরের সুবিধাসহ আধুনিক সজ্জা ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুম রয়েছে, যা আরামদায়ক পরিবেশে থাকার জন্য উপযোগী।

৫।Hotel Athena Internationa-কাটপট্টি রোডে অবস্থিত এই হোটেলে ফ্রি সকালের নাস্তা, ওয়াই-ফাই, এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সুবিধা প্রদান করে।

৬।Hotel Charu Residential-বান্দ রোডে অবস্থিত এই হোটেলটি কক্ষের শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ এবং বিনামূল্যে সকালের নাস্তার সুবিধা প্রদান করে।

ভবিষ্যতে আরো বিস্তারিত দেখার জন্য  লিঙ্কটি ভিজিট করুন।

Admin sara

View Comments

Recent Posts

সৌন্দর্যের লীলাভূমি সোনার চর

shonar chor সৌন্দর্যের লীলাভূমি সোনার চর আপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা বঙ্গোপসাগরের  তীরবর্তী সোনার চর ।একটি…

55 years ago

ফাতরার চর,কুয়াকাটা

fatrar char ফাতরার চর বাংলাদেশের কুয়াকাটা সৈকতের নিকটবর্তী এলাকার অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান ,ফাতরার চর(Fatrar Char)।এটি…

55 years ago

লেবুর চর,কুয়াকাটা

lebur-chor লেবুর চর,কুয়াকাটা বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের একটি সুন্দর প্রাকৃতিক স্থান যা বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী জেলার কুয়াকাটা…

55 years ago

আলীপুর মাছ বাজার

আলীপুর মাছ বাজার alipur fish market বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত কুয়াকাটা এলাকার একটি জনপ্রিয় ও বৃহৎ…

55 years ago

সাগর কন্যা কুয়াকাটা

  সাগর কন্যা কুয়াকাটা sagor konna kuakata অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি সাগর কন্যা কুয়াকাটা (Kuakata Sea…

55 years ago

বরিশাল জেলার শীর্ষ দর্শনীয় স্থানসমূহ

বরিশাল জেলার শীর্ষ দর্শনীয় স্থানসমূহ top attractions in barisal district বরিশাল বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক এবং…

55 years ago