বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলায় অবস্থিত একটি স্বপ্নিল জলাভূমি ডিবির হাওর(dibir haor), যা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, জীববৈচিত্র্য ও নৌভ্রমণের জন্য বিখ্যাত। এটি দেশের অন্যতম দর্শনীয় পর্যটনস্থল হিসেবে পরিচিত এবং বিশেষ করে বর্ষাকালে পর্যটকদের আকৃষ্ট করে।ডিবির হাওর সুনামগঞ্জ জেলার উত্তর-পূর্ব অংশে, মেঘালয়ের সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত। বর্ষাকালে এটি একটি বিশাল জলরাশিতে পরিণত হয় এবং শীতকালে এটি ধানক্ষেতে রূপ নেয়। এখানকার জল, আকাশ, পাহাড় ও সবুজ প্রকৃতি একত্রে এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য সৃষ্টি করে।
১। মনোরম নৌভ্রমণ:বর্ষাকালে নৌকা বা ট্রলার নিয়ে হাওরের বিস্তীর্ণ জলরাশিতে ভেসে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা সত্যিই অনন্য। এখানকার স্বচ্ছ পানি, নীল আকাশ আর দূরবর্তী পাহাড়ের ছোঁয়া পর্যটকদের মনে এক অদ্ভুত প্রশান্তি এনে দেয়।
২।পাহাড় ও মেঘালয়ের সংযোগঃডিবির হাওরের আশপাশের এলাকায় ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সুউচ্চ পাহাড় দেখা যায়। বিশেষ করে বৃষ্টির মৌসুমে পাহাড় থেকে ঝর্ণার জলধারা প্রবাহিত হয়, যা পর্যটকদের মুগ্ধ করে।
৩। অতিথি পাখির আবাসস্থলঃশীতকালে ডিবির হাওরে দেশি-বিদেশি নানা প্রজাতির অতিথি পাখি দেখা যায়, যা প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এক দারুণ আকর্ষণ। হাঁস, বক, পানকৌড়ি এবং অন্যান্য জলচর পাখি এখানে অবাধে বিচরণ করে।
৪।মাছের অভয়ারণ্যঃডিবির হাওর দেশের অন্যতম প্রধান মৎস্যভাণ্ডার। বর্ষাকালে এখানকার মাছ ধরার দৃশ্য পর্যটকদের জন্য চমৎকার অভিজ্ঞতা হয়ে ওঠে। স্থানীয় জেলেরা বড়শি, জাল বা হাত দিয়ে মাছ ধরেন, যা দেখতেও আকর্ষণীয়।
ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জগামী বাস বা ট্রেনে যাওয়া যায়। সেখান থেকে তাহিরপুর উপজেলায় পৌঁছে ট্রলার বা নৌকা নিয়ে ডিবির হাওরে যাওয়া যায়। বর্ষাকালে নৌপথেই মূলত ভ্রমণ করা হয়, যা এই হাওরকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।
ডিবির হাওর ভ্রমণের সময় খাবারের জন্য নিকটবর্তী কোনো রেস্টুরেন্ট বা খাবারের দোকান পাওয়া কঠিন হতে পারে। তাই পরামর্শ দেওয়া হয় যে, আপনি সিলেট শহর থেকে যাত্রার আগে প্রয়োজনীয় খাবার ও পানি সঙ্গে নিয়ে নিন। এতে করে আপনি ভ্রমণের সময় ক্ষুধা বা তৃষ্ণা মেটাতে সক্ষম হবেন।
যদি আপনি স্থানীয় খাবারের স্বাদ নিতে চান, তবে জৈন্তাপুর বাজারে কিছু স্থানীয় খাবারের দোকান পাওয়া যেতে পারে। তবে সেখানে খাবারের মান ও পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নেওয়া ভালো।
সর্বোপরি, ডিবির হাওর ভ্রমণের সময় খাবারের ব্যবস্থা নিজেই করে নেওয়া সবচেয়ে নিরাপদ ও সুবিধাজনক।
ডিবির হাওর ভ্রমণের পরিকল্পনা করছেন? সেখানে থাকার জন্য কয়েকটি বিকল্প বিবেচনা করতে পারেন:
ডিবির হাওরের নিকটবর্তী তামাবিল-জৈন্তাপুর সড়কের আশেপাশে বেশ কিছু রিসোর্ট গড়ে উঠেছে। এই রিসোর্টগুলোতে আপনি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সান্নিধ্যে থেকে আরামদায়কভাবে রাতযাপন করতে পারবেন।
যদি আপনি সিলেট শহরে ফিরে থাকতে চান, তবে সেখানে বিভিন্ন মানের হোটেল ও রেস্ট হাউস রয়েছে। আপনার প্রয়োজন ও সামর্থ্য অনুযায়ী নিম্নোক্ত হোটেলগুলো বিবেচনা করতে পারেন:
১।হোটেল হিল টাউন: ভিআইপি রোডে অবস্থিত এই হোটেলটি সিলেটের অন্যতম পরিচিত হোটেল।
২।হোটেল গুলশান: দরগা গেইট এলাকায় অবস্থিত এই হোটেলটি মানসম্মত সেবা প্রদান করে।
২।হোটেল সুরমা: শাহজালাল উপশহরে অবস্থিত এই হোটেলটি আরামদায়ক থাকার ব্যবস্থা প্রদান করে
৩।হোটেল কায়কোবাদ: এই হোটেলটি সিলেট শহরের কেন্দ্রীয় স্থানে অবস্থিত এবং ভ্রমণকারীদের জন্য সুবিধাজনক।
৪।হোটেল মেট্রো ইন্টারন্যাশনাল: বন্দরবাজারে অবস্থিত এই হোটেলটি আধুনিক সুবিধাসহ সেবা প্রদান করে।
৫।হোটেল স্টার প্যাসিফিক: দরগা গেইটে অবস্থিত এই হোটেলটি উচ্চমানের সেবা ও আরামদায়ক থাকার ব্যবস্থা প্রদান করে
৬।হোটেল রোজ ভিউ: শাহজালাল উপশহরে অবস্থিত এই হোটেলটি বিলাসবহুল সেবা প্রদান কর।
৭।হোটেল ফরচুন গার্ডেন: নাইওরপুলে অবস্থিত এই হোটেলটি সিলেটের অন্যতম পরিচিত হোটেল
৮হোটেল ডালাস: জেল সড়কে অবস্থিত এই হোটেলটি মানসম্মত সেবা প্রদান করে।
৯।হোটেল গার্ডেন ইন: লিঙ্ক রোডে অবস্থিত এই হোটেলটি আরামদায়ক থাকার ব্যবস্থা প্রদান করে
১০।হোটেল পলাশ: আম্বরখানায় অবস্থিত এই হোটেলটি সাশ্রয়ী মূল্যে সেবা প্রদান করে।
১১।হোটেল দরগাগেইট: দরগা এলাকায় অবস্থিত এই হোটেলটি পর্যটকদের জন্য সুবিধাজনক
১২।হোটেল উর্মি: এই হোটেলটি সিলেট শহরের কেন্দ্রীয় স্থানে অবস্থিত এবং ভ্রমণকারীদের জন্য সুবিধাজনক।
১৩।হোটেল মুন লাইট: জিন্দাবাজারে অবস্থিত এই হোটেলটি সাশ্রয়ী মূল্যে সেবা প্রদান করে।
১৪।গুলশান সেন্টার: তালতলায় অবস্থিত এই হোটেলটি মানসম্মত সেবা প্রদান করে
এই হোটেলগুলোর রুম ভাড়া ৪০০ টাকা থেকে ৫,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে, যা আপনার বাজেট ও প্রয়োজন অনুযায়ী নির্বাচন করতে পারবেন।
ভ্রমণের আগে হোটেল বা রিসোর্টের সাথে যোগাযোগ করে রুমের প্রাপ্যতা ও বর্তমান ভাড়ার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া উচিত, কারণ সময়ের সাথে সাথে ভাড়ার পরিমাণ পরিবর্তিত হতে পারে।
১।বর্ষাকাল (জুন-সেপ্টেম্বর): বিশাল জলরাশি, নৌকা ভ্রমণ ও মেঘালয়ের ঝর্ণার সৌন্দর্য উপভোগের জন্য আদর্শ সময়।
২।শীতকাল (নভেম্বর-ফেব্রুয়ারি): অতিথি পাখি দেখা ও শুষ্ক জমির সৌন্দর্য উপভোগের জন্য ভালো সময়।
✔️ আবহাওয়া অনুযায়ী পোশাক পরিধান করুন।
✔️ নৌকা ভ্রমণের সময় নিরাপত্তার জন্য লাইফ জ্যাকেট ব্যবহার করুন।
✔️ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় প্লাস্টিক ও আবর্জনা না ফেলার চেষ্টা করুন।
✔️ স্থানীয় খাবার ও সংস্কৃতি উপভোগ করতে ভুলবেন না।
ডিবির হাওর ঘুরতে আসলে,হাকালুকি হাওড় ঘুরে আসতে পারেন।
বাংলাদেশের পাহাড়ি সৌন্দর্যের কথা বললেই যে কয়টি স্থানের নাম সবার আগে মনে পড়ে, তার মধ্যে…
ঢাকা শহরের মিরপুরে অবস্থিত প্রাণ-প্রকৃতির মিলনমেলা বাংলাদেশের জাতীয় চিড়িয়াখানা (Bangladesh National Zoo) , যা আমাদের…
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ভোলার স্বাধীনতা জাদুঘর(freedom museum bhola)। ভোলা…
ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলায় অবস্থিত একটি দৃষ্টিনন্দন পর্যটন আকর্ষণ জ্যাকব টাওয়ার(jakob tower), যা "বাংলার আইফেল…
বাংলাদেশের একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর দ্বীপ চর কুকরি মুকরি(chor kukri mukri)এলাকা, যা ভোলা জেলার দক্ষিণে…
বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলার নিমতলা গ্রামের পাশে অবস্থিত একটি মনোরম ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর…
View Comments