গুটিয়া মসজিদ, যা মূলত বায়তুল আমান জামে মসজিদ নামে পরিচিত।মসজিদটি বাংলাদেশের বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার গুটিয়া গ্রামে অবস্থিত। এটি দেশের অন্যতম সুন্দর ও বৃহৎ মসজিদ হিসেবে খ্যাত। মসজিদটি ইসলামী স্থাপত্যের এক অপূর্ব নিদর্শন এবং স্থানীয় পর্যটকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আকর্ষণ।
মসজিদের ইতিহাস
গুটিয়া মসজিদ ২০০৩ সালে নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ২০০৬ সালে এটি উদ্বোধন করা হয়। এর প্রতিষ্ঠাতা হলেন সাঈদ ইসমাইল হোসেন সেরনিয়াবাত, যিনি একজন সমাজসেবক এবং দানশীল ব্যক্তি ছিলেন। মসজিদটি তার ধর্মীয় বিশ্বাস এবং এলাকার মানুষদের সুবিধার জন্য গড়ে তোলা হয়েছে। মসজিদটি নির্মাণের সময় প্রাচীন ইসলামী স্থাপত্যের পাশাপাশি আধুনিক স্থাপত্যশৈলীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
স্থাপত্যশৈলী ও গঠন
গুটিয়া মসজিদটি তার আর্কিটেকচারাল ডিজাইনের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। এর বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:
মসজিদটির প্রধান অংশে তিনটি বড় গম্বুজ রয়েছে এবং বেশ কয়েকটি মিনার রয়েছে যা মসজিদটির নকশাকে আরও শৈল্পিক করে তোলে।মসজিদের ভেতরে এবং বাইরের অংশে সাদা মার্বেল ও শৈল্পিক টাইলস ব্যবহার করা হয়েছে। মসজিদের প্রবেশপথ ও মেঝেতে মার্বেল পাথরের কারুকাজ করা হয়েছে যা দেখলে মুগ্ধ হতে হয়।মসজিদের দেওয়াল ও ছাদে আকর্ষণীয় খোদাই করা রয়েছে যা ইসলামী স্থাপত্যের ছোঁয়া এনে দেয়। মসজিদের চারপাশে রয়েছে সুন্দরভাবে সাজানো বাগান এবং একটি বড় পুকুর। পুকুরটি মসজিদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে এবং মসজিদের সঙ্গে একটি দৃষ্টিনন্দন প্রাকৃতিক পরিবেশ তৈরি করেছে।
পরিবেশ ও সৌন্দর্য ঃ
গুটিয়া মসজিদের চারপাশে রয়েছে সবুজ গাছপালা ও ফুলের বাগান যা মসজিদের সৌন্দর্যকে আরও বর্ধিত করেছে। মসজিদের সামনের পুকুরে পানির ফোয়ারা এবং বিভিন্ন ধরনের জলজ উদ্ভিদের উপস্থিতি পুরো স্থানের পরিবেশকে আরও মনোরম করে তোলে।
ধর্মীয় ও সামাজিক গুরুত্ব
গুটিয়া মসজিদ শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় স্থান নয়, এটি একটি সামাজিক কেন্দ্র হিসেবেও কাজ করে। এখানে স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায় নিয়মিত নামাজ আদায় করে থাকে এবং বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিশেষ করে, জুমা’র নামাজ এবং ঈদে এই মসজিদে বিশাল সংখ্যক মুসল্লির সমাগম ঘটে।
গুটিয়া মসজিদ পর্যটন আকর্ষণ
গুটিয়া মসজিদ তার অসাধারণ স্থাপত্যশৈলী ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশের জন্য পর্যটকদের কাছে একটি আকর্ষণীয় স্থান। বরিশাল বা তার আশেপাশের এলাকায় বেড়াতে আসা পর্যটকরা এই মসজিদে এসে এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পছন্দ করেন। বিশেষ করে, যারা ধর্মীয় স্থাপনা ও স্থাপত্যশৈলী দেখতে আগ্রহী, তারা এই মসজিদটি পরিদর্শনে আসেন।
ঢাকা থেকে গুটিয়া মসজিদে যাতায়তের মাধ্যমঃ
ঢাকা থেকে গুটিয়া মসজিদ , বরিশালে যাতায়াতের জন্য কয়েকটি প্রধান পথ রয়েছে। আপনি বাস, লঞ্চ বা বিমান ব্যবহার করে যাতায়াত করতে পারেন।
বাসের মাধ্যমে –ঢাকা থেকে সরাসরি বরিশাল পর্যন্ত বেশ কয়েকটি বাস সার্ভিস রয়েছে। আপনি গাবতলী, সায়েদাবাদ বা মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে বাস ধরতে পারেন। নন এসি এবং এসি বাস সার্ভিস রয়েছে সবসময়।সাধারণত ৫-৬ ঘণ্টা সময় লাগে (সড়কের অবস্থা এবং ট্রাফিকের উপর নির্ভর করে)সাকুরা, বিআরটিসি,হানিফ,এনা,গ্রীন লাইন, ইত্যাদি।
লঞ্চ সার্ভিসঃসদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে বিভিন্ন লঞ্চ বরিশালের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। জনপ্রিয় লঞ্চ সার্ভিসগুলির মধ্যে রয়েছে সুন্দরবন, পারাবত, এম ভি প্রিন্স আওলাদ,এডভেঞ্চার ,মানামি,সুরভী ইত্যাদি।
বিমানের মাধ্যমেঃঢাকা থেকে বরিশাল বিমানবন্দরে সরাসরি ফ্লাইট রয়েছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এবং ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স এই রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে। ফ্লাইটের সময় প্রায় ৪৫-৬০ মিনিট।
বরিশাল থেকে গুটিয়া মসজিদে যাওয়ার জন্য কয়েকটি ভিন্ন উপায় রয়েছে। নিচে সেইসব উপায়ের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হলো:
বরিশাল শহর থেকে গুটিয়া মসজিদ সড়কপথে সবচেয়ে সহজে যাওয়া যায়। গুটিয়া মসজিদ বরিশাল শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সড়কপথে গুটিয়া মসজিদে যাওয়ার উপায়গুলো হলো:
বরিশাল শহর থেকে ব্যক্তিগত গাড়ি বা মোটরসাইকেল নিয়ে সরাসরি গুটিয়া মসজিদে যেতে পারেন।
১। বাস: বরিশাল শহর থেকে গুটিয়া মসজিদ যাওয়ার জন্য স্থানীয় বাস সার্ভিসও রয়েছে। বরিশাল কেন্দ্রীয় বাস স্ট্যান্ড থেকে বাসে উঠতে হবে এবং গুটিয়া মোড়ে নেমে সেখান থেকে রিকশা বা অটো রিকশায় মসজিদে পৌঁছানো যাবে।
২। সিএনজি অটো রিকশা: বরিশাল শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে সিএনজি বা অটো রিকশা নিয়ে সরাসরি গুটিয়া মসজিদে যাওয়া সম্ভব। সিএনজি অটো রিকশা সাধারণত দলগত যাত্রীদের নিয়ে যাওয়া সুবিধাজনক হয়।
এই যাত্রাপদ্ধতিগুলির মধ্যে আপনার সুবিধা ও পছন্দ অনুযায়ী যে কোনোটি বেছে নিতে পারেন।ভবিষ্যতে বরিশালের গুটিয়া মসজিদ ঘুরতে আসলে , একবারের জন্য হলেও দুর্গাসাগর দীঘি ,বরিশাল।Durga Sagar Dighi ঘুরে যাবেন।
View Comments