সিলেট বিভাগ

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেটের জাফলং

জাফলং(jaflong) সিলেট শহর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর ও জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র, যা সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত। এটি ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত এবং প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে ভরপুর। মেঘালয়ের সুউচ্চ পাহাড়, পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ জলধারা, ঝর্ণা, চা-বাগান এবং কাশিয়া আদিবাসীদের জীবনধারা জাফলংকে অন্যন্য পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত করেছে।এখানে পিয়াইন নদী ভারতের পাহাড় থেকে নেমে এসে বাংলাদেশের ভেতরে প্রবাহিত হয়েছে,প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেটের জাফলং, যা পর্যটকদের মূল আকর্ষণ।

জাফলংয়ের আকর্ষণীয় স্থান ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যঃ

১. পিয়াইন নদীঃজাফলংয়ের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত পিয়াইন নদী এই অঞ্চলের প্রধান আকর্ষণ। এটি ভারতের মেঘালয়ের পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে বাংলাদেশে প্রবাহিত হয়েছে। নদীর স্বচ্ছ জল, নুড়ি-পাথর আর পাশের সবুজ পাহাড় মিলে এক মোহনীয় দৃশ্য তৈরি করে।

jaflong

২. মেঘালয়ের পাথুরে পাহাড় ও ঝর্ণাঃজাফলংয়ের পাশে মেঘালয়ের বিশাল পাহাড় অবস্থিত, যেগুলো বর্ষাকালে কুয়াশায় ঢেকে যায়। এখানকার ঝর্ণাগুলো বিশেষ করে বর্ষার সময় খুবই প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে, যা পর্যটকদের আকর্ষণ করে।

jaflong

৩. কাশিয়া আদিবাসী গ্রামঃএখানে বসবাসকারী কাশিয়া আদিবাসীদের জীবনযাত্রা, সংস্কৃতি এবং তাঁদের চা-বাগান দেখতে পর্যটকরা বিশেষভাবে আগ্রহী। তাঁদের তৈরি বিভিন্ন বেত ও বাঁশের সামগ্রীও পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

jaflong

৪. শিলাবতী নদী ও পাথর উত্তোলনঃজাফলংয়ের পাথর শিল্প অন্যতম বিখ্যাত। শিলাবতী নদী থেকে নুড়ি-পাথর সংগ্রহ করে বিভিন্ন নির্মাণকাজে ব্যবহার করা হয়। এই পাথর উত্তোলনের দৃশ্যও পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়।

jaflong

৫. চা বাগান ও সবুজ প্রকৃতিঃ

জাফলংয়ে বিস্তীর্ণ চা-বাগান রয়েছে, যা পাহাড়ের ঢালে এক মোহনীয় সৌন্দর্য তৈরি করেছে। চা বাগানের সবুজে ঘেরা প্রাকৃতিক পরিবেশ মনোমুগ্ধকর।

জাফলং ভ্রমণের সেরা সময়ঃ

১ । শীতকাল (নভেম্বর – ফেব্রুয়ারি): আবহাওয়া ঠান্ডা ও মনোরম থাকে, নদীর স্বচ্ছ জল এবং পাহাড়ের দৃশ্য উপভোগের জন্য এটি আদর্শ সময়।

২। বর্ষাকাল (জুন – আগস্ট): ঝর্ণাগুলো পূর্ণ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, যা প্রকৃতিকে আরও মনোরম করে তোলে।

ঢাকা থেকে সিলেট যাওয়ার উপায়ঃ

১। বাসে: ঢাকা থেকে সিলেটগামী বিভিন্ন বিলাসবহুল বাস (এনা, শ্যামলী, সৌদিয়া, হানিফ) পাওয়া যায়।

২। ট্রেনে: ঢাকার কমলাপুর থেকে পারাবত, জয়ন্তিকা, উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনে সিলেট যাওয়া যায়।

৩। বিমানে: হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সরাসরি ফ্লাইট আছে।

সিলেট থেকে জাফলং যাওয়ার উপায়ঃ

সিলেট শহর থেকে সিএনজি, মাইক্রোবাস, বা প্রাইভেট কারে সহজেই জাফলং পৌঁছানো যায় (প্রায় ৬২ কিলোমিটার, ২ ঘণ্টা সময় লাগে)।

Bd Nature Jaflong

সিলেট শহরে থাকার ব্যবস্থাঃ

জাফলংয়ে এবং সিলেট শহরে থাকার জন্য বিভিন্ন হোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে:

১। জাফলং ট্যুরিস্ট মোটেল।

২। হিলভিউ রিসোর্ট।

৩।সিলেট শহরের বিলাসবহুল হোটেল (রোজ ভিউ, স্টার প্যাসিফিক, গ্র্যান্ড প্যালেস)।

সিলেট শহরে খাবার ব্যবস্থাঃ

১. দেশি ও সিলেটি খাবারঃজাফলংয়ে বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে, যেখানে দেশি ও সিলেটি খাবার পরিবেশন করা হয়। বিশেষ করে মাছ, ভর্তা, ভুনা খিচুড়ি এবং শুটকি ভর্তার চাহিদা বেশি।

২. পাহাড়ি ও কাশিয়া খাবারঃকাশিয়া আদিবাসীদের কিছু ঐতিহ্যবাহী খাবার জাফলংয়ে পাওয়া যায়। তারা মূলত বাঁশের তৈরি বিশেষ খাবার এবং হাতে বানানো ভাতের সাথে বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি পরিবেশন করে।

৩. চায়ের আসরঃসিলেট মানেই চা, আর জাফলংয়ে গেলে পাহাড়ি চায়ের স্বাদ না নিলে ভ্রমণ অসম্পূর্ণ থেকে যায়। এখানে বিভিন্ন চায়ের দোকানে মশলাদার চা, আদা চা, দুধ চা ও কালো চা পাওয়া যায়।

সিলেটের  বিখ্যাত খাবারঃ

১। বাঁশের ভেতরে রান্না করা মাংস

২। কাশিয়া শাকসবজি রান্না

৩। বিশেষ সুপ ও ভাত

সিলেট শহরে কোথায় খাবেনঃ

জাফলংয়ে উন্নতমানের হোটেল কম থাকলেও, কিছু ভালো মানের খাবার হোটেল পাওয়া যায়:

জাফলং ট্যুরিস্ট রেস্টুরেন্ট – দেশি ও সিলেটি খাবার

হিলভিউ রেস্টুরেন্ট – পাহাড়ের দৃশ্য উপভোগ করতে করতে খাওয়ার সুযোগ

গ্রিন পার্ক রেস্টুরেন্ট – মাছ ও স্থানীয় খাবারের জন্য জনপ্রিয়

পিয়াইন নদীর পাশের ছোট খাবার দোকানগুলো – কম দামে ভালো দেশি খাবার

জাফলং ভ্রমণের টিপসঃ

১। পানির বোতল ও হালকা খাবার সঙ্গে রাখা ভালো।

২।বৃষ্টি বা গরমের সময় ছাতা ও সানগ্লাস নেওয়া প্রয়োজন।

৩।নদীতে নামার সময় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

৪।স্থানীয় গাইড নিয়ে ঘুরলে ভালো হয়।

সিলের জাফলং ঘুরতে আসলে ,হাতে সময় নিয়ে ঘুরতে আসবেন, একসাথে রাতালগুল ঘুরে যাবেন।

Admin sara

View Comments

Recent Posts

মেঘে ঢাকা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিলগিরিNilgiri

বাংলাদেশের পাহাড়ি সৌন্দর্যের কথা বললেই যে কয়টি স্থানের নাম সবার আগে মনে পড়ে, তার মধ্যে…

4 weeks ago

প্রাণ-প্রকৃতির মিলনমেলা বাংলাদেশের জাতীয় চিড়িয়াখানা

ঢাকা শহরের মিরপুরে অবস্থিত প্রাণ-প্রকৃতির  মিলনমেলা বাংলাদেশের জাতীয়  চিড়িয়াখানা (Bangladesh National Zoo) , যা আমাদের…

2 months ago

ঐতিহ্য সংরক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ভোলার স্বাধীনতা জাদুঘর

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ভোলার স্বাধীনতা জাদুঘর(freedom museum bhola)। ভোলা…

2 months ago

দৃষ্টিনন্দন পর্যটন আকর্ষণ জ্যাকব টাওয়ার

ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলায় অবস্থিত একটি দৃষ্টিনন্দন পর্যটন আকর্ষণ জ্যাকব টাওয়ার(jakob tower), যা "বাংলার আইফেল…

3 months ago

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর দ্বীপ চর কুকরি মুকরি

বাংলাদেশের একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর দ্বীপ চর কুকরি মুকরি(chor kukri mukri)এলাকা, যা ভোলা জেলার দক্ষিণে…

3 months ago

মনোরম ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর আকিলপুর সমুদ্র সৈকত

বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলার নিমতলা গ্রামের পাশে অবস্থিত একটি মনোরম ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর…

3 months ago