বরিশাল বিভাগ

পটুয়াখালীতে রহস্যময় কানাই-বলাই দিঘী

kanai bolai dighi

পটুয়াখালীতে রহস্যময় কানাই-বলাই দিঘী

পটুয়াখালী জেলায় বাউফল উপজেলার ১নং কাছিপাড়া ইউনিয়নে ঐতিহ্যবাহী তীর্থস্থান কানাই-বলাই দিঘী অবস্থিত।আনুমানিক শতাধিক বছর পূর্বে এই এলাকার লোকজনের বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা করার জন্য এই দিঘীটি খনন করা হয়েছিল।দিঘীটির আনুমানিক দৈর্ঘ্য প্রায় দুইশ’ মিটার ও প্রস্থ একশ’ চল্লিশ মিটার। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা মনে করেন কানাই-বলাই দিঘী তাদের কাছে একটি তীর্থস্থান।তবে বর্তমানে সংস্কারের অভাবে অস্তিত্ব বিলীনের পথে কানাই-বলাই দিঘী।কথিত আছে, শতাধিক বছর পূর্বে কাছিপাড়া গ্রামে কানাই-বলাই নামে দুই ভাই থাকতো। দুই ভাই প্রতিদিন ভোর রাতে উঠে নিজ গ্রামের সকল হিন্দু বাড়িতে বাড়িতে নাম কীর্তন করতো।একদিন কানাই ও বলাই এই দিঘীতে গোসল করার সময় দুটো বড় গজাল মাছ তাদেরকে নিয়ে দিঘীর গভীরে চলে যায়। এরপর আর কোনোদিন দুই ভাইয়ের দেখা মেলেনি। তারপর থেকেই এ দিঘীটি কানাই-বলাই দিঘী নামে পরিচিতি লাভ করেছে।এছাড়াও স্থানীয় লোকজনের মনে এই দিঘী ঘিরে রয়েছে আরো নানান রহস্যজনক কথা। দিঘীর গভীরতা কেউ বলতে পারেন না। কেউ মনে করেন এই দিঘীর কোন তলদেশ নেই।পটুয়াখালীতে রহস্যময় কানাই-বলাই দিঘী অবস্থিত ,কেউ কেউ মনে করেন এই দিঘীর জলে রয়েছে সোনার হাড়ি পাতিলের রহস্যের ইতিহাস।

kanai bolai dighi

এ ব্যাপারে একজন নারী দর্শনার্থী হীরা রাণী দাস বলেন, আমরা হিন্দুরা মনে করি এই কানাই-বলাই দিঘী আমাদের কাছে একটি তীর্থস্থান। আমি প্রতি বছর পহেলা বৈশাখে এখানে আসি পূজা-অর্চনা করতে এবং দিঘীর জলে দুধ, কলা দিতে ও স্নান করতে।

স্থানীয় বাসিন্দা মীম আক্তারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে যারা ভালো মন নিয়ে আসে তাদের সকল ইচ্ছে পূরণ হয় দেখেছি।

দিঘীর পাশ্ববর্তী বাসিন্দা মনির হোসেন বলেন, আমার বাপ, চাচাদের কাছ থেকে কানাই-বলাই দিঘীর সম্পর্কে অনেক ঘটনা শুনেছি।আর যারা কানাই-বলাই দিঘীকে ভক্তি শ্রদ্ধা করে না বা কটূক্তি করে তাদের বিপদ হয়। তিনি আরও বলেন, প্রায় বিশ বছর আগে তৎকালীন কাছিপাড়া বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ক্ষিপ্ত হয়ে তার বিদ্যালয়ের ছাত্রদের নিয়ে এসে কানাই-বলাই দিঘী তল্লাশি করার সময় এক ছাত্র জলের নিচে অনেক ঘর বাড়ি দেখতে পায় এবং সেটা জলের নিচ থেকে কারও কাছে বলতে বারণ করে।

কানাই-বলাই দিঘী সত্য না মিথ্যা এটা পরীক্ষা করার জন্য আসে উপজেলার মাধবপুরা গ্রামের এক মহিলা।তিনি জলের নিচে কি আছে সেটা দেখার জন্য দিঘীর জলে ডুব দেয়, সেই মহিলা ডুব দেয়ার পর দিঘীর পানিতে তলিয়ে যায় এবং চার দিন পরে তার লাশ ভেসে উঠে।এই দিঘী থেকে ক্ষতি হয়েছে গুটি কয়েক লোকের কারণ তারা এটাকে অবিশ্বাস করতো বলে। কিন্তু যুগ যুগ ধরে এর সুবিধা ভোগ করে আসছে দেশ-বিদেশের হাজার হাজার মানুষ ও এই এলাকার লোকজন।

পটুয়াখালী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, খলিলুর রহমান মোহন মিয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেন, আমি কিছুদিন আগে কানাই-বলাই দিঘী পরিদর্শন করেছি। আমার জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতা করেছি।দিঘীতে ঘাটলা ও মহিলারা যাতে গোসল করে জামা কাপড় পাল্টাতে পারে তার জন্য একটি ছোট পাকা ঘর করে দিয়েছি।ভবিষ্যতে কানাই-বলাই দিঘীর ইতিহাস ঐতিহ্য তথা পটুয়াখালী জেলার হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থানকে আমার জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে সবধরনের সাহায্যে সহযোগীতা আমি করব।

kanai bolai dighi

সরেজমিনে দেখা গেছে, যুগযুগ ধরে চলে আসা বিশ্বাসের তীর্থস্থান কানাই-বলাই দিঘীটি আজ জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। সংস্কারের অভাবে অস্তিত্ব বিলীনের পথে তীর্থস্থান কানাই-বলাই দিঘী।দিঘী সংস্কারের জন্য সরকারিভাবে কিছু আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে। দিঘীর পাশে ছোট একটি পাকা ঘর রয়েছে, সেই ঘরে নারীরা গোসল করে জামা কাপড় পরিবর্তন করেন। দিঘীতে গোসল করার জন্য ছোট একটি ঘাটলা তৈরি করা হয়েছে।

কানাই-বলাই দিঘীর পাড়ে কখন ওরশ বসেঃ

kanai bolai dighi

প্রতিবছর ফাল্গুনমাসের ৯-১১ তারিখ দিঘীর পাড়ে ওরশের আয়োজন করা হয় ।তখন সকল ধর্মের মানুষ একত্রিত হয়।

ঢাকা থেকে পটুয়াখালী যাওয়ার উপায়ঃ

ঢাকা থেকে পটুয়াখালী যাওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি উপায় রয়েছে। আপনি নিজের সুবিধা অনুযায়ী যেকোনোটি বেছে নিতে পারেন:
১।বাসে যাওয়াঃঢাকা থেকে পটুয়াখালীতে সরাসরি বাস সার্ভিস রয়েছে।
বাস ধরার জায়গাঃগাবতলী, সায়েদাবাদ বা কল্যাণপুর বাস টার্মিনাল।
বাসের ধরনঃএসি ও নন-এসি।
সময় লাগবে:প্রায় ৭-৮ঘণ্টা।২।লঞ্চে যাওয়াঃপটুয়াখালীতে লঞ্চে যাওয়া আরও আরামদায়ক হতে পারে।
লঞ্চ ধরার জায়গা:সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালজনপ্রিয় লঞ্চ সার্ভিসঃসুন্দরবন, সুরভি, এমভি মানিক।সময় লাগবেঃপ্রায় ৮-১০ ঘণ্টা।রাতের লঞ্চগুলোতে কেবিন সুবিধা পাওয়া যায়

পটুয়াখালী থেকে কিভাবে কানাই-বলাই দিঘী যাওয়া যায়ঃ

পটুয়াখালী জেলা শহর থেকে বাসে বাউফল উপজেলায় এসে রিকশা নিয়ে কাছিপাড়া ইউনিয়নে অবস্থিত কানাই-বলাই দিঘী যাওয়া যায়।

কানাই-বলাই দিঘী ঘুরতে গেলে কোথায় থাকবেনঃ

কাছিপাড়া ইউনিয়নে থাকার জন্য সু-ব্যবস্থা নাই।তবে চাইলে স্থানীয় বাসিন্দাদের বাসায় রাত্রি যাপন করা যাবে।তাছাড়া বাউফলে থাকার জন্য মধ্যম মানের হোটেলের ব্যবস্থা আছে।

কানাই-বলাই দিঘী ঘুরতে গেলে কোথায় খাবেনঃ

বাউফলে খাবার জন্য মধ্যম মানের খাবার হোটেলের ব্যবস্থা আছে।এছাড়া পটুয়াখালী শহরে গেলে ভালমানের অনেক খাবার হোটেল খুজে পাবেন।

Admin sara

View Comments

Recent Posts

মেঘে ঢাকা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিলগিরিNilgiri

বাংলাদেশের পাহাড়ি সৌন্দর্যের কথা বললেই যে কয়টি স্থানের নাম সবার আগে মনে পড়ে, তার মধ্যে…

4 weeks ago

প্রাণ-প্রকৃতির মিলনমেলা বাংলাদেশের জাতীয় চিড়িয়াখানা

ঢাকা শহরের মিরপুরে অবস্থিত প্রাণ-প্রকৃতির  মিলনমেলা বাংলাদেশের জাতীয়  চিড়িয়াখানা (Bangladesh National Zoo) , যা আমাদের…

2 months ago

ঐতিহ্য সংরক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ভোলার স্বাধীনতা জাদুঘর

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ভোলার স্বাধীনতা জাদুঘর(freedom museum bhola)। ভোলা…

2 months ago

দৃষ্টিনন্দন পর্যটন আকর্ষণ জ্যাকব টাওয়ার

ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলায় অবস্থিত একটি দৃষ্টিনন্দন পর্যটন আকর্ষণ জ্যাকব টাওয়ার(jakob tower), যা "বাংলার আইফেল…

3 months ago

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর দ্বীপ চর কুকরি মুকরি

বাংলাদেশের একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর দ্বীপ চর কুকরি মুকরি(chor kukri mukri)এলাকা, যা ভোলা জেলার দক্ষিণে…

3 months ago

মনোরম ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর আকিলপুর সমুদ্র সৈকত

বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলার নিমতলা গ্রামের পাশে অবস্থিত একটি মনোরম ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর…

3 months ago