বরিশাল বিভাগ

বরিশাল রায়পাশা গ্রামের আকর্ষণ মিয়াবাড়ি মসজিদ

বরিশাল সদরের কড়াপুর ইউনিয়নের রায়পাশা গ্রামের সুপ্রাচীন স্থাপত্যশৈলীর অনিন্দ্য সুন্দর আকর্ষণ মিয়াবাড়ি মসজিদ(Mia bari Mosjid)। এটি ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত বলে মনে করা হয়।মসজিদটি নির্মাণের ইতিহাস সম্পর্কে জনশ্রুতি রয়েছে, ‘মিয়াবাড়ি মসজিদটি বৃহত্তর বরিশাল অঞ্চলের ব্রিটিশ আমলের সূচনালগ্নে নির্মিত একটি মসজিদ। ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করা হায়াত মাহমুদ এ মসজিদটি নির্মাণ করেন। বরিশালের হাতেম আলী কলেজের চৌমাথা থেকে মাত্র ৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মসজিদটি।

karapur mia bari mosjidbarisal

কড়াপুর মিয়াবাড়ি মসজিদটি মুঘল আমলে নির্মিত বাংলাদেশের একটি প্রাচীন মসজিদ। এ মসজিদটি দ্বিতলবিশিষ্ট। মসজিদটির নিচে রয়েছে ছয়টি দরজাবিশিষ্ট আবাসন ব্যবস্থা। সেখানে  মাদরাসার ছাত্রদের জন্য আবাসন ব্যবস্থা রয়েছে। মসজিদটি দেখতে অনেক সুন্দর ও কারুকার্যময় ।

karapur mia bari mosjidbarisal

স্থাপত্যশৈলী ও নকশা:

কড়াপুর মিয়াবাড়ি মসজিদের স্থাপত্যশৈলী মোঘল আমলের প্রতিফলন বহন করে। এর স্থাপত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো তিনটি গম্বুজ, যা মসজিদের সামনের দিকে সারিবদ্ধভাবে স্থাপন করা হয়েছে। মসজিদটির ভেতরের স্থাপত্যে মোটা খিলান এবং স্থায়ী স্তম্ভ রয়েছে, যা এর নির্মাণের টেকসইতাকে বোঝায়। দেয়ালে সূক্ষ্ম খোদাই করা জ্যামিতিক ও ফুলেল নকশা রয়েছে, যা মোঘল আমলের মসজিদ স্থাপত্যের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য।মসজিদের দেয়াল মোটা এবং শক্তিশালীভাবে তৈরি, যা তৎকালীন নির্মাণশৈলীর অন্যতম চিহ্ন বহন করে। স্থাপত্যের নকশাগুলি স্থানীয় কারিগরদের দক্ষতার পরিচায়ক, যারা এই মসজিদটিকে এক অসাধারণ শিল্পকর্মে পরিণত করেছেন। মসজিদের বাইরের চত্বরটি উন্মুক্ত, যা প্রার্থনার জন্য এবং বৃহৎ জমায়েতের জন্য ব্যবহৃত হতে পারে।

karapur mia bari mosjidbarisal

মিয়াবাড়ি মসজিদের প্রতিষ্ঠাকালীন ইতিহাস:

কড়াপুর মিয়াবাড়ি মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন স্থানীয় মিয়া জমিদার পরিবার, যারা তৎকালীন সময়ে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান এবং সামাজিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখতেন। জমিদার পরিবারের মূল উদ্দেশ্য ছিল একটি স্থায়ী ধর্মীয় স্থাপনা নির্মাণের মাধ্যমে এলাকাবাসীর মধ্যে ইসলামের শিক্ষার প্রসার ঘটানো। জমিদার পরিবারটি এই মসজিদটি নির্মাণের মাধ্যমে তাদের আধ্যাত্মিক ও সামাজিক প্রভাব বিস্তার করেছিলেন।

ঢাকা থেকে বারিশাল যাওয়ার মাধ্যমঃ

ঢাকা থেকে বরিশাল যাওয়ার বেশ কয়েকটি মাধ্যম রয়েছে। আপনি আপনার প্রয়োজন ও সুবিধা অনুযায়ী যেকোনোটি বেছে নিতে পারেন। নিচে ঢাকা থেকে বরিশাল যাওয়ার প্রধান মাধ্যমগুলো দেওয়া হলো:

লঞ্চঃঢাকা থেকে বরিশাল যাওয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় ও রোমাঞ্চকর উপায় হলো লঞ্চ বা স্টিমার। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে বরিশালের উদ্দেশ্যে প্রতিদিন লঞ্চ ছাড়ে। সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত লঞ্চগুলি ছাড়ে, এবং সকালে বরিশালে পৌঁছায়।সময়: প্রায় ৮-১০ ঘণ্টা।ভাড়া: সিটের ধরন অনুযায়ী ভাড়া পরিবর্তিত হয় (ডেক, কেবিন, এসি কেবিন)।

বাস:ঢাকা থেকে বরিশালে সরাসরি এসি ও নন-এসি বাস সার্ভিস রয়েছে। গাবতলী, সায়েদাবাদ এবং মহাখালী থেকে বাসগুলি ছাড়ে।সময়: প্রায় ৫-৬ ঘণ্টা।ভাড়া: এসি ও নন-এসি বাসের জন্য ভাড়া ৫০০-১০০০ টাকা (ভেদাভেদ থাকতে পারে)।

বিমান:যদি দ্রুত বরিশাল পৌঁছাতে চান, তবে বিমান একটি ভালো বিকল্প। ঢাকা থেকে প্রতিদিন বরিশালের উদ্দেশ্যে ফ্লাইট রয়েছে।সময়: প্রায় ৩০-৪০ মিনিট।ভাড়া: ফ্লাইটের ভাড়া সময় ও সিটের ধরন অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়।

karapur mia bari mosjidbarisal

মিয়াবাড়ি মসজিদ বরিশাল সদর থেকে কিভাবে যাবেনঃ

বরিশাল সদর থেকে করাপুর মিয়া বাড়ি মসজিদ সড়কপথে যাওয়া বেশ সহজ। বরিশালের সদর রোড থেকে সরাসরি গাড়ি বা রিকশা নিতে পারেন।

প্রথম ধাপ:বরিশাল সদর থেকে রিকশা বা অটোরিকশায়  নথুল্লাবাদ বাস স্ট্যান্ডে যান।

দ্বিতীয় ধাপঃনথুল্লাবাদ থেকে সরাসরি করাপুরের দিকে যাওয়ার জন্য সিএনজি বা লোকাল গাড়ি (বাস/অটোরিকশা) পাবেন।

তৃতীয় ধাপ: করাপুর পৌঁছে সেখান থেকে স্থানীয় মানুষজনের সহায়তায় মিয়া বাড়ি মসজিদ খুঁজে পেতে পারেন। মসজিদটি ঐতিহ্যবাহী হওয়ায় স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে পথ নির্দেশনা পাওয়া সহজ হবে।

মিয়াবাড়ি মসজিদ ঘুরতে আসলে কোথায় থাকবেনঃ

বরিশাল সদর থেকে মাত্র ৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মসজিদটি।বরিশাল সদরে থাকার জন্য অনেক আবাসিক হোটেল রয়েছে। আপনি আপনার বাজেট অনুসারে যেকোনো আবাসিক হোটেলে থাকতে পারেন।এদের মধ্যে হোটেল গ্র্যান্ড পার্ক(০১৭৭৭-৭৩৫১৭২), হোটেল এথেনা ইন্টারন্যাশনাল(০১৭১২-২৬১৬৩৩),হোটেল আলি ইন্টারন্যাশনাল,হোটেল  সেডোনা উল্লেখযোগ্য।

কোথায় খাবেনঃ

১।জাফরান রেস্টুরেন্ট – বারিশালের অন্যতম জনপ্রিয় রেস্টুরেন্ট, যা চাইনিজ এবং ইন্ডিয়ান খাবারের জন্য প্রসিদ্ধ।

২।তাওয়া রেস্টুরেন্ট – স্থানীয় খাবার যেমন মাছ, ভর্তা, ও ভাতের জন্য বিখ্যাত।

৩।হান্ডি করাই – মাটন ডিশের জন্য বিশেষভাবে সুপরিচিত।

৪।ধানসিড়ি রেস্টুরা – স্থানীয় খাবারের একটি জনপ্রিয় রেস্টুরেন্ট।

বরিশাল সদরে ভালমানের রসগোল্লা পাওয়া যায়।আবশ্যই নিতাই ও হকের রসগোল্লা খাবেন।

মিয়াবাড়ি মসজিদ ঘুরতে আসলে ,একবারের জন্য হলেও কলসকাঠির জামিদার বাড়ি ঘুরে যাবেন।

Admin sara

View Comments

Recent Posts

মেঘে ঢাকা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিলগিরিNilgiri

বাংলাদেশের পাহাড়ি সৌন্দর্যের কথা বললেই যে কয়টি স্থানের নাম সবার আগে মনে পড়ে, তার মধ্যে…

4 weeks ago

প্রাণ-প্রকৃতির মিলনমেলা বাংলাদেশের জাতীয় চিড়িয়াখানা

ঢাকা শহরের মিরপুরে অবস্থিত প্রাণ-প্রকৃতির  মিলনমেলা বাংলাদেশের জাতীয়  চিড়িয়াখানা (Bangladesh National Zoo) , যা আমাদের…

2 months ago

ঐতিহ্য সংরক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ভোলার স্বাধীনতা জাদুঘর

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ভোলার স্বাধীনতা জাদুঘর(freedom museum bhola)। ভোলা…

3 months ago

দৃষ্টিনন্দন পর্যটন আকর্ষণ জ্যাকব টাওয়ার

ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলায় অবস্থিত একটি দৃষ্টিনন্দন পর্যটন আকর্ষণ জ্যাকব টাওয়ার(jakob tower), যা "বাংলার আইফেল…

3 months ago

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর দ্বীপ চর কুকরি মুকরি

বাংলাদেশের একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর দ্বীপ চর কুকরি মুকরি(chor kukri mukri)এলাকা, যা ভোলা জেলার দক্ষিণে…

3 months ago

মনোরম ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর আকিলপুর সমুদ্র সৈকত

বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলার নিমতলা গ্রামের পাশে অবস্থিত একটি মনোরম ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর…

3 months ago