বরিশাল

ধ্বংসের পথে লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি ,বরিশাল।

ধ্বংসের পথে লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি ,বরিশাল

lakutia zamindar bari

লললাকুটিয়া জমিদার বাড়ি, যা বরিশাল জেলার ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যগুলির মধ্যে অন্যতম, বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৭ শতকে, যখন মগধ (বর্তমান বিহার, ভারত) থেকে আসা কন্যা রাজকন্যা লাকুটিয়া জমিদারের স্ত্রী হয়ে আসেন।লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের একটি ঐতিহ্যবাহী জমিদার বাড়ি। এই জমিদার বাড়ি স্থানীয় ইতিহাস, সংস্কৃতি, এবং ব্রিটিশ আমলের জমিদারি ব্যবস্থার সাথে গভীরভাবে জড়িত। কিন্তু আজ ধ্বংসের পথে লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি ,বরিশাল।

lakutia zamindar bari

লাকুটিয়া জমিদার বাড়ির প্রতিষ্ঠা ও ইতিহাস:

লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি বরিশাল সদর উপজেলার লাকুটিয়া গ্রামে অবস্থিত। আনুমানিক ১৭০০ খ্রিস্টাব্দে জমিদার রূপচন্দ্র রায়ের পুত্র রাজচন্দ্র রায় এই জমিদার বাড়ির নির্মাণ শুরু করেন। তিন শতাধিক বছর ধরে দাঁড়িয়ে থাকা এই বাড়িটি ব্রিটিশ শাসনামলের জমিদারি সংস্কৃতি ও স্থাপত্যশৈলীর চমৎকার উদাহরণ। বিশাল আকারের এই প্রাসাদে রয়েছে সুন্দর কারুকার্য খচিত দরজা, জানালা এবং ছাদের ভাস্কর্য, যা তৎকালীন স্থাপত্যের শৈল্পিক গুণাবলী প্রকাশ করে।বর্তমানে লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি ঐতিহাসিক পর্যটনস্থানে পরিণত হয়েছে। এই স্থানে বিভিন্ন পর্যটক ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য দেখতে আসেন। বরিশাল শহর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে অবস্থিত লাকুটিয়া জমিদার বাড়িটি দেখতে চাইলে স্থানীয় যানবাহনের মাধ্যমে সহজেই পৌঁছানো সম্ভব।

lakutia zamindar bari

লাকুটিয়া জমিদার বাড়ির স্থাপত্য ও ডিজাইন:

লাকুটিয়া জমিদার বাড়ির স্থাপত্যশৈলী বাংলা ও ইউরোপীয় স্থাপত্যের মিশ্রণে গড়ে উঠেছে। বাড়ির মূল কাঠামোটি দোতলা, যা বিভিন্ন স্থাপত্যিক বৈশিষ্ট্যে সমৃদ্ধ। এখানে রয়েছে বিশাল প্রবেশদ্বার, নকশা করা ছাদ, কারুকাজ করা স্তম্ভ, এবং বিস্তৃত বারান্দা। বাড়ির অঙ্গনটি অত্যন্ত সুন্দরভাবে পরিকল্পিত, যেখানে একটি বড় পুকুর এবং উদ্যান রয়েছে।

বাড়িটির অন্দরসজ্জাও অত্যন্ত মনোরম, যা জমিদারদের সচ্ছল জীবনযাপনের প্রতিফলন। এই জমিদার বাড়ির সিলিং, দরজা, এবং জানালায় কাঠের খোদাই করা নকশা এবং রঙিন কাচের ব্যবহার দেখতে পাওয়া যায়, যা স্থানীয় কারিগরদের দক্ষতার পরিচয় দেয়।

লাকুটিয়া জমিদার বাড়ির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য:

জমিদার বাড়িটি শুধুমাত্র একটি বাসস্থান নয়, এটি ছিল একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রও। এখানে নিয়মিতভাবে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হতো। জমিদাররা স্থানীয় লোকজনের মধ্যে শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রচার করতেন। এছাড়াও, বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় কার্যক্রমের জন্য জমিদার বাড়িটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত।

lakutia zamindar bari

লাকুটিয়া জমিদার বাড়ির বর্তমান অবস্থা:

বর্তমানে লাকুটিয়া জমিদার বাড়িটি একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়েছে। যদিও সময়ের সাথে সাথে বাড়িটির কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তবে এটি এখনো পর্যটকদের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান। বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তর বাড়িটির রক্ষণাবেক্ষণ এবং সংস্কারের দায়িত্বে রয়েছে।

লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি বরিশালের একটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা, যা বাংলার জমিদারি প্রথা এবং স্থাপত্যশৈলীর একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। এই জমিদার বাড়ি বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়।

ঢাকা থেকে লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি যাওয়ার উপায়

ঢাকা থেকে লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি, বরিশাল পৌঁছানোর জন্য আপনি বেশ কয়েকটি উপায় ব্যবহার করতে পারেন। এই প্রক্রিয়াটি বেশ সহজ এবং আপনার যাতায়াতের পছন্দ অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে।

১। ঢাকা থেকে বরিশালের উদ্দেশ্যে সরাসরি বাসে যাত্রা করা সবচেয়ে প্রচলিত এবং সাশ্রয়ী উপায়। ঢাকা থেকে বরিশালের উদ্দেশ্যে সরাসরি বাস পাওয়া যায় সায়েদাবাদ বা গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে। বেশ কয়েকটি এসি এবং নন-এসি বাস সার্ভিস যেমন, শাহজালাল, ঈগল, গ্রিনলাইন ইত্যাদি সরাসরি বরিশালের উদ্দেশ্যে যায়। সময়: যাত্রার সময় সাধারণত ৫-৭ ঘণ্টা

২। আপনি যদি একটু আরামদায়ক এবং প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে চান, তাহলে লঞ্চে যাত্রা করতে পারেন।   ঢাকা সদরঘাট থেকে বরিশালের উদ্দেশ্যে প্রতিদিন বেশ কয়েকটি লঞ্চ ছেড়ে যায়।লঞ্চগুলোর মধ্যে পারাবত, সুন্দরবন, সুরভী বিশেষভাবে জনপ্রিয়। লঞ্চে যাত্রার সময় সাধারণত ৮-১২ ঘণ্টা।

৩। যদি আপনি দ্রুত সময়ে বরিশাল পৌঁছাতে চান, তাহলে আকাশপথে যেতে পারেন। ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বরিশাল বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে সরাসরি ফ্লাইট রয়েছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স, নভোএয়ার ইত্যাদি এয়ারলাইন্সগুলো ঢাকা থেকে বরিশাল রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে। ফ্লাইটের সময় সাধারণত ৪০-৫০ মিনিট।

বরিশাল থেকে লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি যাওয়ার উপায়

বরিশাল শহরে পৌঁছানোর পর, আপনি লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি যেতে রিকশা, অটোরিকশা বা প্রাইভেট কার ব্যবহার করতে পারেন।

লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি বরিশাল শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। স্থানীয় গাইড বা গুগল ম্যাপের সাহায্যে সহজেই আপনি এই জমিদার বাড়িতে পৌঁছাতে পারবেন। বরিশাল শহর থেকে লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি পৌঁছাতে সাধারণত ৩০-৪৫ মিনিট সময় লাগে।

বরিশাল সদরে থাকার ব্যবস্থাঃ

বরিশাল সদরে কিছু মানসম্পন্ন হোটেল রয়েছে, যেগুলো পর্যটকদের জন্য আরামদায়ক এবং নিরাপদ থাকার ব্যবস্থা প্রদান করে। এখানে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হোটেল:

১।হোটেল গ্র্যান্ড পার্ক-বরিশালের অন্যতম বিলাসবহুল হোটেল, যা আন্তর্জাতিক মানের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে। এখানে সুইমিং পুল, রেস্টুরেন্ট, এবং কনফারেন্স সুবিধা রয়েছে।

২।হোটেল সেডোনা-সদর রোডে অবস্থিত এই হোটেলে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ এসি এবং নন-এসি কক্ষ পাওয়া যায়।

৩।হোটেল রিচমার্ট গেস্ট হাউজ -এটি লঞ্চঘাটের কাছে অবস্থিত এবং ভালো মানের রুম ও পরিষেবা দিয়ে থাকে।

৪।হোটেল এরিনা-সদর রোডের কাছেই অবস্থিত এবং এটি আধুনিক ও সুন্দরভাবে সজ্জিত কক্ষ দিয়ে পরিচিত।

৫।হোটেল এথেনা-কাটপট্টি রোডে অবস্থিত এই হোটেলে মানসম্মত পরিষেবা এবং ফ্রি ওয়াই-ফাই সুবিধা রয়েছে।

এই হোটেলগুলো শহরের কেন্দ্রীয় এলাকায় অবস্থিত, যা পর্যটকদের বরিশালের গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থানগুলোতে সহজে পৌঁছাতে সাহায্য করে।

বরিশাল সদরে খাবার ব্যবস্থাঃ

১।লেক ভিউ রেস্টুরেন্ট-এটি চৌমাথা বাজারের পাশে অবস্থিত এবং লেকের পাশে সুন্দর পরিবেশে দেশি ও বিদেশি খাবার সরবরাহ করে।

২।ভাই ভাই হোটেল-এটি বরিশালের জনপ্রিয় দেশি খাবারের রেস্টুরেন্ট, যেখানে বিভিন্ন ধরনের খাবার পাওয়া যায়।

৩।খাবার বাড়ি রেস্টুরেন্ট -বরিশালে বিভিন্ন ধরনের খাবার উপভোগের জন্য একটি ভালো স্থান।

৪।কাটা চামচ রেস্টুরেন্ট-স্থানীয়দের মধ্যে মজাদার খাবারের জন্য পরিচিত, সুন্দর পরিবেশে বৈচিত্র্যময় মেনু সরবরাহ করে।

৫।জাফরান রেস্টুরেন্ট-বারিশালের অন্যতম জনপ্রিয় রেস্টুরেন্ট, যা চাইনিজ এবং ইন্ডিয়ান খাবারের জন্য প্রসিদ্ধ।

৬।তাওয়া রেস্টুরেন্ট-স্থানীয় খাবার যেমন মাছ, ভর্তা, ও ভাতের জন্য বিখ্যাত

এই যাত্রাপদ্ধতিগুলির মধ্যে আপনার সুবিধা ও পছন্দ অনুযায়ী যে কোনোটি বেছে নিতে পারেন।

বরিশালের লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি ঘুরতে আসলে, ঘুরে আসুন একবারের জন্য হলেও শের-ই-বাংলা এ কে ফজলুল হক স্মৃতি জাদুঘর, চাখার, বানারীপাড়া, বরিশাল||Sher-e-Bangla Memorial Museum,Barisal.

Admin sara

View Comments

Recent Posts

সৌন্দর্যের লীলাভূমি সোনার চর

shonar chor সৌন্দর্যের লীলাভূমি সোনার চর আপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা বঙ্গোপসাগরের  তীরবর্তী সোনার চর ।একটি…

55 years ago

ফাতরার চর,কুয়াকাটা

fatrar char ফাতরার চর বাংলাদেশের কুয়াকাটা সৈকতের নিকটবর্তী এলাকার অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান ,ফাতরার চর(Fatrar Char)।এটি…

55 years ago

লেবুর চর,কুয়াকাটা

lebur-chor লেবুর চর,কুয়াকাটা বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের একটি সুন্দর প্রাকৃতিক স্থান যা বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী জেলার কুয়াকাটা…

55 years ago

আলীপুর মাছ বাজার

আলীপুর মাছ বাজার alipur fish market বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত কুয়াকাটা এলাকার একটি জনপ্রিয় ও বৃহৎ…

55 years ago

সাগর কন্যা কুয়াকাটা

  সাগর কন্যা কুয়াকাটা sagor konna kuakata অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি সাগর কন্যা কুয়াকাটা (Kuakata Sea…

55 years ago

বরিশাল জেলার শীর্ষ দর্শনীয় স্থানসমূহ

বরিশাল জেলার শীর্ষ দর্শনীয় স্থানসমূহ top attractions in barisal district বরিশাল বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক এবং…

55 years ago