পটুয়াখালী

লেবুর চর,কুয়াকাটা

lebur-chor

লেবুর চর,কুয়াকাটা

বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের একটি সুন্দর প্রাকৃতিক স্থান যা বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী জেলার কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত।লেবুর চর কুয়াকাটার মূল সৈকত থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত।এটি মূলত বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত একটি ছোট দ্বীপ, যা তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, বন্যপ্রাণী এবং নিসর্গের জন্য বেশ জনপ্রিয়। পর্যটকরা কুয়াকাটা ভ্রমণের সময় লেবুর চরে যেতে পারেন এবং এখানে সৈকত, নদী ও সাগরের মিলন দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন।লেবুর চরে যাওয়ার পর পর্যটকরা নৌকাভ্রমণ, ছবি তোলা, বালুর চরে হাঁটা, পাখি দেখা এবং নিরিবিলি পরিবেশে সময় কাটানোর সুযোগ পাবেন। বিশেষত ফটোগ্রাফারদের জন্য স্থানটি অত্যন্ত আকর্ষণীয়।

lebur chor

কীভাবে লেবুর চর যাবেন

লেবুর চর কুয়াকাটার মূল সৈকত থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে পৌঁছে ট্রলারে বা স্পিডবোটে সহজেই লেবুর চরে পৌঁছানো যায়। সাধারণত ট্রলার ভাড়া করে ৩০-৪৫ মিনিটে পৌঁছানো সম্ভব। যাতায়াতের সময়টি নির্ভর করে সমুদ্রের ঢেউ ও আবহাওয়ার উপর

lebur chor

লেবুর চরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য

লেবুর চর তার নির্জন সৈকত, সুন্দর সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্যের জন্য বিখ্যাত। কুয়াকাটা বাংলাদেশের একমাত্র সৈকত যেখানে একই জায়গা থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত উপভোগ করা যায়, এবং লেবুর চর এই সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে তোলে। এখানে বিশাল বালুর চর, নারিকেল গাছ, এবং লাল কাঁকড়া চোখে পড়ে, যা পর্যটকদের কাছে বেশ আকর্ষণীয়। স্থানটি বেশ নিরিবিলি হওয়ায় এখানে প্রকৃতির সৌন্দর্য নিবিড়ভাবে উপভোগ করা যায়।

lebur chor

লেবুর চরে খাওয়ার ব্যবস্থা:

কুয়াকাটার লেবুর চর মূলত একটি সুন্দর প্রাকৃতিক এলাকা যেখানে ভ্রমণকারীরা সমুদ্র, চর এবং প্রকৃতির সাথে সময় কাটাতে পারেন। সেখানে খাবারের জন্য বেশ কিছু বিকল্প রয়েছে:

১।স্থানীয় রেস্টুরেন্ট ও রিসোর্ট: লেবুর চর বা কুয়াকাটার আশেপাশে বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্ট ও রিসোর্ট রয়েছে, যেখানে বাঙালি খাবারসহ স্থানীয় বিশেষ কিছু খাবার পাওয়া যায়, যেমন – ইলিশ মাছ, চিংড়ি, কাঁকড়া, এবং আরও অনেক কিছু।

২।সামুদ্রিক খাবারের স্টল: কুয়াকাটা অঞ্চলে বেশ কিছু ছোট ছোট খাবারের স্টল রয়েছে যেখানে তাজা সামুদ্রিক খাবার, যেমন – মাছের ভাজা, ভর্তা, ভাজি, এবং রাইস পাওয়া যায়। এসব স্টল বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সমুদ্রতীরের আশেপাশে পাওয়া যায়।

৩।পিকনিক ও ক্যাম্পিং ব্যবস্থা:অনেক পর্যটক লেবুর চর ও এর আশেপাশে পিকনিক বা ক্যাম্পিং করতে পছন্দ করেন। এর জন্য নিজস্ব রান্নার ব্যবস্থা রাখা যায়। খাবারের জন্য স্থানীয় বাজার থেকে মাছ, মাংস, সবজি কিনে নিয়ে এসে রান্না করা যায়।

৪।ট্যুর প্যাকেজে অন্তর্ভুক্ত খাবার: কিছু ভ্রমণ সংগঠন লেবুর চরের জন্য ট্যুর প্যাকেজ অফার করে, যেখানে খাবার অন্তর্ভুক্ত থাকে। এই ধরনের প্যাকেজে সাধারণত সকাল, দুপুর, ও রাতের খাবারের ব্যবস্থা থাকে এবং এটি নির্ভরযোগ্য ও সুবিধাজনক।

৫।ফুড ডেলিভারি: বর্তমানে কুয়াকাটাতে কিছু হোটেল বা রিসোর্ট ফুড ডেলিভারির ব্যবস্থাও করে থাকে, তাই যারা লেবুর চরে ঘুরতে গিয়ে হোটেলে ফিরে এসে খাবার চাইবেন তাদের জন্য এটি আরেকটি ভালো বিকল্প হতে পারে।

যেতে যাওয়ার আগে খাবারের ব্যবস্থা সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে নিলে এবং আগাম বুকিং করলে ভ্রমণ আরও আরামদায়ক হবে।

lebur chor

কুয়াকাটায় থাকার ব্যবস্থাঃ

লেবুর চর কুয়াকাটার মূল সৈকত থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। কুয়াকাটায় পর্যটকদের থাকার জন্য বিভিন্ন ধরনের হোটেল, রিসোর্ট এবং গেস্ট হাউস রয়েছে, যা বিভিন্ন বাজেটের ভ্রমণকারীদের জন্য উপযুক্ত। কুয়াকাটা একটি জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র হওয়ায় এখানে থাকার ব্যবস্থা সময়ের সাথে উন্নত হয়েছে এবং পর্যটকদের আরামদায়ক অভিজ্ঞতা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করা হয়।

কুয়াকাটায় পর্যটকদের থাকার জন্য বিভিন্ন ধরনের হোটেল, রিসোর্ট এবং গেস্ট হাউস রয়েছে, যা বিভিন্ন বাজেটের ভ্রমণকারীদের জন্য উপযুক্ত। কুয়াকাটা একটি জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র হওয়ায় এখানে থাকার ব্যবস্থা সময়ের সাথে উন্নত হয়েছে এবং পর্যটকদের আরামদায়ক অভিজ্ঞতা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করা হয়।

১। Ocean View Resort:সমুদ্রের সোজাসুজি অবস্থান এবং আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন রুম রয়েছে।

২। Sikder Resort & Villas: একটি বিলাসবহুল রিসোর্ট, যেখানে প্রাইভেট বীচের সুবিধা রয়েছে।

৩। Kuakata Grand Hotel & Sea Resort: বিলাসবহুল সুবিধাসহ আধুনিক হোটেল, যেখানে সমুদ্রের দর্শন     করার সুযোগ রয়েছে।

৪। Hotel Graver Inn International: সমুদ্রের কাছাকাছি অবস্থিত এবং পরিবারের জন্য উপযুক্ত।

৫। Ananda Bari Resort: প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং আরামদায়ক কক্ষসহ মাঝারি বাজেটের জন্য আদর্শ।

৬। Hotel Nilanjana: পরিচ্ছন্নতা এবং আরামদায়ক কক্ষের জন্য পরিচিত।

৭। Hotel Khan Palace: বাজেট ফ্রেন্ডলি এবং সস্তা থাকার ব্যবস্থা।

৮।Hotel Banani Palace: অল্প খরচে থাকার জন্য ভালো একটি অপশন।

বর্তমানে কুয়াকাটার বেশিরভাগ হোটেল এবং রিসোর্ট অনলাইনে বুকিং সুবিধা প্রদান করে। ফলে ভ্রমণের আগে আপনার সুবিধামতো হোটেল নির্বাচন করে বুকিং করে নিতে পারেন।

কুয়াকাটায় খাবারের ব্যবস্থাঃ

কুয়াকাটায় বেশ কিছু জনপ্রিয় রেস্টুরেন্ট রয়েছে, যা পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন ধরনের খাবার এবং সুবিধা প্রদান করে। এখানকার রেস্টুরেন্ট গুলোতে স্থানীয় সামুদ্রিক খাবার থেকে শুরু করে চাইনিজ ও কন্টিনেন্টাল খাবারেরও প্রচুর পাওয়া যায়।

১। Hotel Graver Inn Restaurant:কুয়াকাটার অন্যতম জনপ্রিয় রেস্টুরেন্ট। এখানে চাইনিজ, কন্টিনেন্টাল, এবং দেশীয় খাবারের বৈচিত্র্য পাওয়া যায়। তাজা সামুদ্রিক খাবারের জন্য এটি বেশ পরিচিত।ফ্রাইড রাইস, চিলি চিকেন, গ্রিলড ফিশ, চিংড়ি তরকারি, এবং বিভিন্ন ধরনের ভর্তা ও ভাজি।

২। Sikder Resort & Villas Restaurant: সামুদ্রিক খাবারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক রেসিপি অনুযায়ী তৈরি চাইনিজ ও কন্টিনেন্টাল খাবার।

৩।Kuakata Grand Hotel & Sea Resort Restaurant:স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক খাবার, বিশেষ করে গ্রিলড ফিশ, চিংড়ি, এবং চাইনিজ ফ্রাইড রাইস।

৪।Nilanjana Restaurant:সাশ্রয়ী মূল্যে বাংলা খাবার সহ সামুদ্রিক খাবার পরিবেশন করে। ভাত, মাছের তরকারি, চিংড়ি, কাঁকড়া কারি, এবং বিভিন্ন ভর্তা। এটি কুয়াকাটার বাজেট ভ্রমণকারীদের জন্য জনপ্রিয়।

৫।Purnima Restaurant:এই রেস্টুরেন্টটি সাশ্রয়ী এবং পরিবারের সঙ্গে খাবার খাওয়ার জন্য জনপ্রিয়। এখানেও সামুদ্রিক খাবারের পাশাপাশি দেশীয় খাবার পাওয়া যায়। মাছ, চিংড়ি, দেশীয় তরকারি, এবং চাইনিজ খাবারের ভালো সমন্বয়।

৬।. Hotel Khan Palace Restaurant:এটি একটি বাজেট ফ্রেন্ডলি হোটেলের রেস্টুরেন্ট, যেখানে সহজলভ্য দামে মানসম্মত খাবার পরিবেশন করা হয়।স্থানীয় খাবার, যেমন ভাত-মাছ, ডাল, ভর্তা, এবং বিভিন্ন ধরনের ভাজি।

ঢাকা থেকে কুয়াকাটায় যাওয়ার উপায়ঃ

১।সড়কপথে (বাস বা প্রাইভেট গাড়ি): বাস এবং প্রাইভেট গাড়ি উভয়েই কুয়াকাটায় যেতে পারে।ঢাকা থেকে বিভিন্ন বাস সার্ভিস কুয়াকাটার জন্য নিয়মিত চলাচল করে। বাসগুলো সাধারণত রাতে ছেড়ে যায় এবং ভোরের দিকে কুয়াকাটায় পৌঁছে।যেমনঃSakura Paribahan,Green Line,Hanif Enterprise,Saint Martin Paribahan প্রায় ৭-৮ ঘণ্টা সময় লাগে।ভাড়া: নন-এসি বাসের ভাড়া সাধারণত ৬০০-৮০০ টাকা, এবং এসি বাসের ভাড়া ১২০০-১৫০০ টাকার মধ্যে।

২। নদীপথে (লঞ্চ):নদীপথে ঢাকা থেকে বরিশাল বা পটুয়াখালী হয়ে কুয়াকাটা যাওয়া যায়। এটি তুলনামূলকভাবে আরামদায়ক এবং সুন্দর অভিজ্ঞতা দেয়, বিশেষত যারা নদীপথ পছন্দ করেন তাদের জন্য।ঢাকা থেকে বরিশাল বা পটুয়াখালীতে লঞ্চ সার্ভিস রয়েছে, যা সাধারণত রাতের বেলায় ছেড়ে ভোরে পৌঁছে।যেমনঃSurovi,Parabat,Sundarban,Green Line Waterways (ফাস্ট লঞ্চ)সময়: লঞ্চে বরিশাল পৌঁছাতে ৮-১০ ঘণ্টা লাগে।তারপর বরিশাল থেকে কুয়াকাটায় বাসে যেতে প্রায় ৩-৪ ঘণ্টা লাগে।

৩।আকাশপথে (বিমান):আকাশপথে ঢাকা থেকে বরিশাল যাওয়া যায়, এরপর সড়কপথে কুয়াকাটা।ঢাকা থেকে বরিশাল প্রতিদিন বেশ কয়েকটি ফ্লাইট ছেড়ে যায়।যেমনঃBiman Bangladesh Airlines, US-Bangla Airlines, NovoAir। বরিশাল পৌঁছাতে ৩০-৪০ মিনিট সময় লাগে।বরিশাল বিমানবন্দর থেকে বাস বা প্রাইভেট গাড়িতে করে কুয়াকাটা যেতে প্রায় ৩-৪ ঘণ্টা সময় লাগে।

Admin sara

View Comments

Recent Posts

সৌন্দর্যের লীলাভূমি সোনার চর

shonar chor সৌন্দর্যের লীলাভূমি সোনার চর আপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা বঙ্গোপসাগরের  তীরবর্তী সোনার চর ।একটি…

55 years ago

ফাতরার চর,কুয়াকাটা

fatrar char ফাতরার চর বাংলাদেশের কুয়াকাটা সৈকতের নিকটবর্তী এলাকার অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান ,ফাতরার চর(Fatrar Char)।এটি…

55 years ago

আলীপুর মাছ বাজার

আলীপুর মাছ বাজার alipur fish market বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত কুয়াকাটা এলাকার একটি জনপ্রিয় ও বৃহৎ…

55 years ago

সাগর কন্যা কুয়াকাটা

  সাগর কন্যা কুয়াকাটা sagor konna kuakata অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি সাগর কন্যা কুয়াকাটা (Kuakata Sea…

55 years ago

বরিশাল জেলার শীর্ষ দর্শনীয় স্থানসমূহ

বরিশাল জেলার শীর্ষ দর্শনীয় স্থানসমূহ top attractions in barisal district বরিশাল বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক এবং…

55 years ago

বরিশাল রায়পাশা গ্রামের আকর্ষণ মিয়াবাড়ি মসজিদ

বরিশাল রায়পাশা গ্রামের আকর্ষণ মিয়াবাড়ি মসজিদ karapur mia bari mosjidbarisal বরিশাল সদরের কড়াপুর ইউনিয়নের রায়পাশা…

55 years ago