বাংলাদেশের একটি নয়নাভিরাম জলপ্রপাত মায়াবী ঝর্না(Mayabi-Waterfall), যা পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। এটি পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান জেলার থানচি উপজেলায় অবস্থিত। প্রকৃতির অপূর্ব শোভায় ঘেরা এই ঝর্না ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য।মায়াবী ঝর্নাটি বান্দরবান জেলার থানচি উপজেলায় অবস্থিত। থানচি থেকে রেমাক্রি বাজার হয়ে প্রায় ৪-৫ কিলোমিটার ট্রেকিং করে ঝর্নাটির দেখা পাওয়া যায়। এই ঝর্নায় যাওয়ার পথে আপনাকে নৌকা ও হেঁটে যেতে হবে, যা ভ্রমণকে আরও রোমাঞ্চকর করে তোলে।
১।মায়াবী ঝর্না তিনটি ধাপে প্রবাহিত হয়, যা একে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
২।ঝর্নার পানি পাহাড়ের গা বেয়ে নিচে প্রবাহিত হয়ে ছোট একটি পুকুরের মতো জায়গা তৈরি করেছে, যেখানে পর্যটকরা স্নান করতে পারেন।
৩।বর্ষাকালে ঝর্নার পানির প্রবাহ বেড়ে যায়, তখন এটি আরও মোহনীয় হয়ে ওঠে।
৪।ঝর্নার চারপাশে ঘন সবুজ অরণ্য ও পাহাড়ি পরিবেশ পর্যটকদের মুগ্ধ করে।
প্রথমে আপনাকে ঢাকা থেকে বান্দরবান যেতে হবে। ঢাকা থেকে বান্দরবানগামী এসি ও নন-এসি বাস পাওয়া যায়।
যেমন: শ্যামলী পরিবহন ,হানিফ এন্টারপ্রাইজ ,সৌদিয়া পরিবহন ,গ্রিন লাইন ,এস. আলম পরিবহন।সময় লাগবে: প্রায় ৮-১০ ঘণ্টা ,ভাড়া: ৭০০-১৬০০ টাকা (নির্ভর করে বাসের মানের ওপর)।
বান্দরবান থেকে থানচি যাওয়ার জন্য আপনাকে চাঁদের গাড়ি বা জিপ রিজার্ভ নিতে হবে।
১।বাস বা জিপে করে বান্দরবান শহর থেকে থানচি বাজার পর্যন্ত যাওয়া যায়।
২।জিপে গেলে সময় কম লাগবে, তবে বাস তুলনামূলক সস্তা।সময় লাগবে: ৪-৫ ঘণ্টা,
ভাড়া: জনপ্রতি ২৫০-৩০০ টাকা (বাসে), জিপ রিজার্ভ করলে ৫০০০-৭০০০ টাকা
থানচি বাজার থেকে আপনাকে সাঙ্গু নদী ধরে নৌকায় রেমাক্রি যেতে হবে।
১।নদীর পানি স্বচ্ছ ও সুন্দর, চারপাশে পাহাড়ি দৃশ্য উপভোগ করা যায়।
২।লাইফ জ্যাকেট পরা বাধ্যতামূলক।সময় লাগবে: ২-৩ ঘণ্টা,নৌকা ভাড়া: ৪০০০-৬০০০ টাকা (গোষ্ঠীগত নৌকা হলে জনপ্রতি কম খরচ হবে
রেমাক্রি বাজার থেকে হেঁটে মায়াবী ঝর্নায় যেতে হয়।
১।পথে পাথুরে পথ ও ছোট ছোট ঝর্ণা পার হতে হবে।
২।ট্রেকিং করার সময় আরামদায়ক জুতা পরা ভালো।সময় লাগবে: ১-২ ঘণ্টা (গাইড থাকলে সহজ হবে)
মায়াবী ঝর্নার আশেপাশে বড় কোনো রেস্টুরেন্ট নেই, তবে থানচি ও রেমাক্রিতে খাবারের জন্য কিছু ভালো অপশন পাওয়া যায়।
যদি আপনি বান্দরবান শহর থেকে যান, তাহলে এখানে কিছু ভালো মানের রেস্টুরেন্টে খেয়ে নিতে পারেন।
১।নীলাচল রেস্টুরেন্ট – দেশি খাবার, ভাত-মাছ-মাংস
২।মেঘলা রেস্টুরেন্ট – বারবিকিউ ও ঝাল ঝাল মাংসের আইটেম
৩।গ্রীন পিক রেস্টুরেন্ট – পাহাড়ি খাবার ও চাইনিজ আইটেম
থানচি বাজারে স্থানীয় কিছু ছোটখাট রেস্টুরেন্ট ও খাবারের দোকান পাওয়া যায়।জনপ্রিয় খাবারের জায়গা:
১।থানচি বাজারের দেশি খাবার হোটেল – ভাত-মাছ-মাংস
২।পাহাড়ি খাবারের দোকান – বাঁশের ভেতরে রান্না করা চিকেন, পাহাড়ি শাক-সবজি
বান্দরবান শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যই নয়, এখানকার খাবারের স্বাদও ভিন্নধর্মী। পাহাড়ি উপজাতিদের খাবারের পাশাপাশি স্থানীয় বাঙালি খাবারও পাওয়া যায়।
১।বাঁশ চিকেনঃএটি বান্দরবানের সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবার। মুরগির মাংস মশলা দিয়ে মেখে বাঁশের ভেতরে রেখে আগুনে পোড়ানো হয়। এতে একটি বিশেষ ধোঁয়াটে গন্ধ ও স্বাদ আসে।রেমাক্রি, থানচি, বগালেক ও নাফাখুমের স্থানীয় রেস্টুরেন্ট
২।কাচ্চি হান্টঃবান্দরবানে কাচ্চির বেশ ভালো জনপ্রিয়তা রয়েছে। বিশেষ করে “কাচ্চি হান্ট” নামের একটি দোকানের কাচ্চি বিখ্যাত।কাচ্চি হান্ট, বান্দরবান শহর
৩।স্মোকড মিটঃমারমা উপজাতিরা গরু বা শূকরের মাংস শুকিয়ে সংরক্ষণ করে রাখে। এটি রান্না করে খেলে একটু ভিন্ন ধরনের স্বাদ পাওয়া যায়।স্থানীয় উপজাতীয়দের বাড়ি বা বিশেষ খাবারের দোকানে
৪।পাহাড়ি মধুঃবান্দরবানের পাহাড় থেকে সংগ্রহ করা বিশুদ্ধ মধু খুবই জনপ্রিয়। এটি স্বাস্থ্যকর ও উপকারী।স্থানীয় বাজার ও উপজাতীয় সম্প্রদায়ের কাছ থেকে
মায়াবী ঝর্নায় ঘুরতে গেলে আপনাকে বান্দরবান, থানচি, বা রেমাক্রি এলাকায় রাতযাপনের ব্যবস্থা করতে হবে। ঝর্নার আশেপাশে থাকার সরাসরি কোনো ব্যবস্থা নেই, তাই কাছের এলাকা থেকে যাতায়াত করতে হয়।
যদি আপনি থানচি যাওয়ার আগে বা ফিরে বান্দরবান শহরে থাকতে চান, তাহলে এখানে বেশ কিছু ভালো হোটেল ও রিসোর্ট পাবেন।
জনপ্রিয় হোটেল ও রিসোর্ট:
১।হোটেল হিল ভিউ (ভাড়া: ১৫০০-৪৫০০ টাকা)
২।বান্দরবান পর্যটন মোটেল (ভাড়া: ২০০০-৫০০০ টাকা)
৩।মেঘলা রিসোর্ট (ভাড়া: ২৫০০-৬০০০ টাকা)
৪।হোটেল সাঙ্গু (ভাড়া: ১০০০-৩০০০ টাকা)
যেহেতু মায়াবী ঝর্না থানচির কাছাকাছি, আপনি থানচিতে থাকলে সকালে সহজেই রেমাক্রি হয়ে ঝর্নায় যেতে পারবেন।
১।থানচি রেস্ট হাউস (ভাড়া: ৫০০-১৫০০ টাকা)
২।নিরালা রিসোর্ট (ভাড়া: ১০০০-৩০০০ টাকা)
৩।স্থানীয়দের হোমস্টে (ভাড়া: ৫০০-১০০০ টাকা)
✅ পর্যাপ্ত শুকনো খাবার ও পানি সঙ্গে রাখুন।
✅ ওয়াটারপ্রুফ ব্যাগ ও ক্যামেরা নিতে পারেন।
✅ স্থানীয় গাইড নিয়ে গেলে পথ চিনতে সুবিধা হবে।
✅ বর্ষাকালে রাস্তা পিচ্ছিল হয়, তাই সাবধানে চলাফেরা করুন।
✅ পরিবেশ পরিষ্কার রাখুন, প্লাস্টিক বা আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন।
বাংলাদেশের পাহাড়ি সৌন্দর্যের কথা বললেই যে কয়টি স্থানের নাম সবার আগে মনে পড়ে, তার মধ্যে…
ঢাকা শহরের মিরপুরে অবস্থিত প্রাণ-প্রকৃতির মিলনমেলা বাংলাদেশের জাতীয় চিড়িয়াখানা (Bangladesh National Zoo) , যা আমাদের…
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ভোলার স্বাধীনতা জাদুঘর(freedom museum bhola)। ভোলা…
ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলায় অবস্থিত একটি দৃষ্টিনন্দন পর্যটন আকর্ষণ জ্যাকব টাওয়ার(jakob tower), যা "বাংলার আইফেল…
বাংলাদেশের একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর দ্বীপ চর কুকরি মুকরি(chor kukri mukri)এলাকা, যা ভোলা জেলার দক্ষিণে…
বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলার নিমতলা গ্রামের পাশে অবস্থিত একটি মনোরম ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর…
View Comments