monpura dip
বাংলাদেশের একটি সৌন্দর্যমণ্ডিত ও ঐতিহ্যবাহী দ্বীপ হল মনপুরা দ্বীপ(monpura dip)। এটি ভোলা জেলার অন্তর্গত একটি নদীবেষ্টিত দ্বীপ, যা মেঘনা নদীর বুকে অবস্থিত। মনপুরা তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, বনভূমি, এবং নদীর বিস্তীর্ণ জলের কারণে ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্যস্থল।মনপুরা দ্বীপ ভোলা জেলার দক্ষিণ-পূর্বাংশে মেঘনা নদীর বুকে অবস্থিত। আয়তন প্রায় ৩৭৩ বর্গকিলোমিটার। এটি মূলত জলপথে যোগাযোগ নির্ভর।সময় করে ঘুরে আসুন আকর্ষণীয় মনপুরা দ্বীপ।
মনপুরা দ্বীপের প্রধান আকর্ষণ হলো এর অপরূপ প্রাকৃতিক দৃশ্য। নদী, সবুজ গাছপালা, খোলা আকাশ আর শান্ত পরিবেশ দ্বীপটিকে প্রকৃতি প্রেমীদের কাছে স্বর্গীয় করে তোলে।
১। মেঘনার দৃশ্য:সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় মেঘনার মোহনায় যে রঙের খেলা দেখা যায়, তা অবর্ণনীয়।
২। বন্যপ্রাণী: এখানে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও বন্যপ্রাণী পাওয়া যায়। শীতকালে বিভিন্ন পরিযায়ী পাখি এখানে আসে।
৩।চর: দ্বীপের চারপাশে বিস্তীর্ণ চর রয়েছে, যেখানে হালকা বালু আর সবুজ ঘাস মিলে এক ভিন্ন পরিবেশ তৈরি করে।
১। মেঘনার মোহনা: মনপুরা দ্বীপের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া মেঘনা নদীর মোহনা দর্শনীয় স্থান।
২। হরিণের অভয়ারণ্যঃদ্বীপের বনে হরিণের বিচরণ পর্যটকদের কাছে বিশেষ আকর্ষণীয়।
৩।পাখি পর্যবেক্ষণ:শীতকালে এখানে অনেক পরিযায়ী পাখি আসে।
৪।বোটিং ও ফিশিং:মেঘনার বুকে বোটিং এবং ফিশিং করার সুযোগ পর্যটকদের বিশেষভাবে আকৃষ্ট করে।
ঢাকা থেকে মনপুরা যাওয়ার জন্য মূলত লঞ্চ এবং বাসের সংমিশ্রণে ভ্রমণ করতে হয়। এটি একটি সুন্দর কিন্তু ধৈর্যশীল যাত্রা। নিচে ধাপে ধাপে পুরো প্রক্রিয়া বর্ণনা করা হলো
১।লঞ্চেঃঢাকা সদরঘাট থেকে কিছু সরাসরি লঞ্চ মনপুরার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এটি সহজ এবং সময় বাঁচায়।লঞ্চ টার্মিনাল: ঢাকা সদরঘাট।লঞ্চের সময়: সাধারণত সন্ধ্যার পর লঞ্চ ছাড়ে। (প্রায় ৫-৬ ঘণ্টার যাত্রা)ভাড়াঃইকোনমি: ৫০০-৭০০ টাকা।কেবিন: ১৫০০-৩০০০ টাকাসময়ের সুবিধা: রাতের লঞ্চে ভ্রমণ করলে সকালে মনপুরায় পৌঁছানো যায়।
২।বাস :
বাস টার্মিনাল:গাবতলী, সায়েদাবাদ বা মহাখালী বাস টার্মিনাল।বাসের গন্তব্যঃভোলার ইলিশা ফেরিঘাট।ভাড়া: ৬০০-১০০০ টাকা (নন-এসি বা এসি)।সময়: প্রায় ৬-৭ ঘণ্টা।সড়কপথ: ঢাকা → মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে → বরিশাল → ভোলা।
৩।স্পিডবোটে ভ্রমণঃ
ঢাকা থেকে বরিশাল বা ভোলা বাসে গিয়ে, সেখান থেকে স্পিডবোটে মনপুরায় যাওয়া যায়।ভোলা থেকে মনপুরায় স্পিডবোটে সময় লাগে মাত্র ১-১.৫ ঘণ্টা।ভাড়া: ৩০০-৫০০ টাকা (আনুমানিক)।
স্থান: ইলিশা ফেরিঘাট বা ভোলা সদরঘাট।লঞ্চের সময়: সকাল ও দুপুরে লঞ্চ ছাড়ে।ভাড়া: সাধারণত ১৫০-৩০০ টাকা।সময়: প্রায় ২-৩ ঘণ্টা।
১।ভ্রমণের আগে লঞ্চ বা বাসের সময়সূচি নিশ্চিত করুন।
২।শীতকালে পরিযায়ী পাখি এবং মনপুরার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে অনেক বেশি আনন্দদায়ক।
৩।লঞ্চে কেবিন বুক করলে আরামদায়ক হবে।
৪।দ্বীপে পৌঁছে বাজার থেকে তাজা মাছ কিনে রেস্তোরাঁয় রান্না করানোর ব্যবস্থা করতে পারেন।
৫। বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা সব জায়গায় নাও থাকতে পারে। তাই বোতলজাত পানি সঙ্গে রাখা ভালো।
শীতকাল মনপুরা দ্বীপ ভ্রমনের সব থেকে উপযুক্ত সময় ।শীতকালে মনপুরায় ক্যাম্পিং ভ্রমনে বাড়তি আ্নন্দের মাত্রা যোগ করে।
মনপুরা দ্বীপে পর্যটকদের জন্য সীমিত সংখ্যক থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। দ্বীপটি ধীরে ধীরে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে বিকশিত হওয়ায় থাকার জন্য সাধারণ কিন্তু আরামদায়ক কিছু অপশন পাওয়া যায়।
১।স্থানীয় রেস্টহাউস ও হোটেলঃমনপুরা দ্বীপে বেশ কয়েকটি ছোট হোটেল এবং রেস্টহাউস রয়েছে। এগুলোর মান সাধারণ, তবে পর্যটকদের আরামদায়ক থাকার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করা হয়।ভাড়া: প্রতি রাতের জন্য ৫০০-২০০০ টাকা (কক্ষের ধরন অনুযায়ী)।সুবিধা:ফ্যান এবং লাইট সহ সাধারণ কক্ষ।কিছু হোটেলে জেনারেটর সুবিধা।খাবারের জন্য হোটেলের নিজস্ব ব্যবস্থা বা কাছাকাছি স্থানীয় রেস্তোরাঁ।।
২। মনপুরা ট্যুরিস্ট রেস্ট হাউস:
মনপুরা উপজেলার প্রশাসনিক এলাকার কাছাকাছি।পরিচ্ছন্ন পরিবেশ এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো।
৩।স্থানীয় লজ:
দ্বীপের বাজার এলাকার কাছাকাছি কিছু লজ পাওয়া যায়।সাধারণত বাজেট-পর্যটকদের জন্য ভালো বিকল্প।
৪।সরকারি ডাকবাংলোঃ
উপজেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় মনপুরায় সরকারি ডাকবাংলো রয়েছে। প্রশাসনের মাধ্যমে অগ্রিম বুকিং করতে হয়।সবুজ পরিবেশ এবং মনোরম নদীর দৃশ্য উপভোগ করার সুযোগ।তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী।
৫।ক্যাম্পিং ব্যবস্থাঃ
প্রকৃতিপ্রেমী বা অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের জন্য ক্যাম্পিং একটি বিকল্প হতে পারে। দ্বীপের চরের খোলা পরিবেশে ক্যাম্পিং করলে প্রকৃতির কাছাকাছি থাকা যায়।প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র:তাঁবু (টেন্ট)।শুকনো খাবার এবং পানির ব্যবস্থা।মশারোধক ও প্রয়োজনীয় ওষুধ।সতর্কতা:স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে ক্যাম্পিং করা উচিত।রাতে নিরাপত্তার জন্য গ্রুপে থাকার পরামর্শ।
মনপুরা দ্বীপে খাওয়ার জন্য বেশিরভাগ জায়গায় স্থানীয় খাবার এবং সামুদ্রিক মাছের স্বাদ গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। দ্বীপটি শহুরে রেস্তোরাঁর মতো উন্নত খাবারের ব্যবস্থা না থাকলেও সরল ও তাজা খাদ্যের জন্য বিখ্যাত।খাবারের ধরনঃদেশি খাবার (ভাত, ডাল, ভাজি)।মাছ (ইলিশ, চিংড়ি, রূপচাঁদা)।মুরগি বা গরুর মাংস (সীমিত পরিমাণে)। খাবার সাধারণত সাশ্রয়ী। ১০০-৩০০ টাকার মধ্যেই পেট ভরে খাওয়া যায়। রেস্তোরাঁগুলোতে তাজা খাবার পাওয়া যায়, তবে খাবার অর্ডারের পর সময় দিতে হবে।শীতকালে হাসের মাংস ভুনা মনপুরা দ্বীপের খুবই জনপ্রিয় একটি খাবার।তাছাড়া মহিষের দুধের দধি ও পাওয়া যায়।
মনপুরা দ্বীপ ঘুরতে আসলে,আবশ্যই চর কুকরি মুকরি ঘুরে যাবেন।
বাংলাদেশের পাহাড়ি সৌন্দর্যের কথা বললেই যে কয়টি স্থানের নাম সবার আগে মনে পড়ে, তার মধ্যে…
ঢাকা শহরের মিরপুরে অবস্থিত প্রাণ-প্রকৃতির মিলনমেলা বাংলাদেশের জাতীয় চিড়িয়াখানা (Bangladesh National Zoo) , যা আমাদের…
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ভোলার স্বাধীনতা জাদুঘর(freedom museum bhola)। ভোলা…
ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলায় অবস্থিত একটি দৃষ্টিনন্দন পর্যটন আকর্ষণ জ্যাকব টাওয়ার(jakob tower), যা "বাংলার আইফেল…
বাংলাদেশের একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর দ্বীপ চর কুকরি মুকরি(chor kukri mukri)এলাকা, যা ভোলা জেলার দক্ষিণে…
বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলার নিমতলা গ্রামের পাশে অবস্থিত একটি মনোরম ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর…
View Comments