সাদা পাথর (Sada Pathor) সিলেটের অন্যতম সুন্দর পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে একটি। সাদা পাথর মূলত একটি নদীর তীরবর্তী অঞ্চল, যেখানে স্বচ্ছ পানির নিচে সাদা রঙের পাথর দেখা যায়, যা এই জায়গাটিকে অনন্য করে তুলেছে। সিলেটের অন্যতম মনোরম ও আকর্ষণীয় পর্যটন স্থান হল সাদা পাথর, যা প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এক স্বর্গরাজ্য। এটি সিলেট জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত এবং ধলাই নদীর তীরে বিস্তৃত। যা পর্যটকদের মুগ্ধ করে।
১. স্বচ্ছ জল ও সাদা পাথরের সমাহারঃএই অঞ্চলে থাকা ধলাই নদীর স্বচ্ছ নীলাভ পানি ও পাথরের সাদা রঙ একত্রে এক স্বপ্নময় পরিবেশ তৈরি করে। নদীর নিচে থাকা সাদা পাথরগুলো সূর্যের আলোয় ঝলমল করে ওঠে, যা অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর দৃশ্য।
২. নৌকা ভ্রমণের রোমাঞ্চঃসাদা পাথরে যাওয়ার প্রধান আকর্ষণ হলো নৌকা ভ্রমণ। ধলাই নদীর বয়ে চলা হালকা স্রোতে নৌকা নিয়ে ভেসে বেড়ানো এক অনন্য অভিজ্ঞতা।
৩. পাহাড়, ঝর্ণা ও সবুজ প্রকৃতিঃসাদা পাথর ভারতের মেঘালয় সীমান্তের কাছে অবস্থিত। চারপাশে বিস্তৃত পাহাড়, সবুজ বনাঞ্চল, এবং মেঘালয়ের ঝর্ণার দৃশ্য একে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
৪. পাথর উত্তোলন এলাকাঃএলাকাটিতে প্রচুর পাথর উত্তোলন করা হয়। ফলে স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রা ও কাজকর্ম কাছ থেকে দেখার সুযোগ পাওয়া যায়।
৫. ক্যাম্পিং ও পিকনিকের সুবিধাঃঅনেক পর্যটক এখানে ক্যাম্পিং বা পিকনিক করতে আসেন। সন্ধ্যার সময় পাহাড়ের গায়ে সূর্যের আলো এবং রাতের তারাভরা আকাশ এক অপূর্ব অনুভূতি এনে দেয়।
সাদা পাথর যেতে হলে প্রথমে সিলেট শহর থেকে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় যেতে হবে। এরপর উপজেলা সদর থেকে টুকের বাজার হয়ে নৌকা বা গাড়ির মাধ্যমে সরাসরি সাদা পাথর এলাকায় যাওয়া যায়।
১। শীতকাল (নভেম্বর-ফেব্রুয়ারি): পানি স্বচ্ছ থাকে এবং নদীর তলদেশের সাদা পাথর স্পষ্ট দেখা যায়।
২।বর্ষাকালে (জুন-আগস্ট): নদীর জলরাশি বেড়ে যায়, তবে প্রবল স্রোতের কারণে নৌকা ভ্রমণে সতর্ক থাকতে হয়।
সাদা পাথর এলাকায় সরাসরি খাবারের ভালো কোনো স্থায়ী হোটেল বা রেস্টুরেন্ট নেই। তবে আশপাশে কিছু খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে, এবং আপনি চাইলে নিজেও খাবার নিয়ে যেতে পারেন।টুকেরবাজার এবং কোম্পানীগঞ্জ বাজার এলাকায় কিছু স্থানীয় হোটেল ও রেস্টুরেন্ট আছে, যেখানে সাধারণত ভাত, মাছ, মাংস, ডালসহ দেশীয় খাবার পাওয়া যায়।এখান থেকে খাবার কিনে সাদা পাথর এলাকায় নিয়ে যেতে পারেন।
সাদা পাথর এলাকায় সরাসরি থাকার জন্য কোনো উন্নত হোটেল বা রিসোর্ট নেই। তবে কাছাকাছি কিছু বিকল্প রয়েছে, যেমনঃ কোম্পানীগঞ্জ, জাফলং ও সিলেট শহরের হোটেল ও রিসোর্টগুলো।
কোম্পানীগঞ্জ এলাকায় কিছু সাধারণ মানের গেস্ট হাউস ও হোটেল আছে, যেখানে কম খরচে রাত যাপন করা যায়। তবে বিলাসবহুল থাকার ব্যবস্থা নেই।
সাদা পাথর থেকে প্রায় ১৫-২০ কিমি দূরে অবস্থিত জাফলং।এখানে কিছু ভালো মানের রিসোর্ট ও হোটেল আছে।
১। Nazimgarh Resort – প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য আদর্শ
২। Jaflong Inn Hotel – বাজেট ফ্রেন্ডলি অপশন
৩। Hill View Guest House – পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের জন্য ভালো
৪। Riverside Eco Resort – যারা প্রকৃতির মধ্যে থাকতে চান, তাদের জন্য ভালো
১. সাতকরা গোশতঃএটি সিলেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবারগুলোর একটি। গরু বা খাসির মাংসের সঙ্গে সাতকরা (এক ধরনের সুগন্ধি টক ফল) রান্না করা হয়।স্বাদে একটু টক-ঝাল ও মসলাদার হয়। কোম্পানীগঞ্জের লোকাল হোটেল ও বাজারে এই খাবার পাওয়া যায়।
২।জিলাপি ও মিষ্টিঃ কোম্পানীগঞ্জের বাজারে বড় আকারের জিলাপি, রসগোল্লা ও চমচম পাওয়া যায়। সিলেটের বিখ্যাত দই (মিষ্টি দই) এখানেও পাওয়া যায়।
৩। টাটকা নদীর মাছঃকোম্পানীগঞ্জের পাশে থাকা ধলাই নদী থেকে পাওয়া টাটকা মাছ বেশ জনপ্রিয়। ছোট মাছের ভাজা, মাছের ঝোল বা সরষে ইলিশ বিশেষভাবে সুস্বাদু।
৪।শুটকি ভর্তাঃসিলেটের শুটকি খুব বিখ্যাত, বিশেষ করে লোটা শুটকি ও চ্যাপা শুটকি। এটি স্থানীয় রেস্টুরেন্ট ও গ্রাম্য খাবারের দোকানে পাওয়া যায়।
✔ নিরাপত্তার জন্য লাইফ জ্যাকেট পরুন (বিশেষ করে নৌকায় থাকলে)।
✔ পরিবেশ দূষণ করবেন না, নদীতে প্লাস্টিক বা আবর্জনা ফেলবেন না।
✔ সকাল বেলা গেলে ভালো— ভিড় কম থাকে, ছবি তুলতে সুবিধা হয়।
✔ যদি ক্যাম্পিং বা পিকনিক করতে চান, তাহলে প্রয়োজনীয় খাবার ও পানীয় সাথে আনুন।
✔ ক্যামেরা বা ড্রোন ব্যবহার করতে চাইলে স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নেওয়া ভালো।
⚠️ বর্ষাকালে নদীর প্রবল স্রোত থাকে, তাই অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করুন।
⚠️ পাথরের ওপর সাবধানে হাঁটুন, কারণ কিছু জায়গায় পিচ্ছিল হতে পারে।
⚠️ স্থানীয়দের নির্দেশনা মেনে চলুন, এবং অনুপ্রবেশযোগ্য স্থানে যাবেন না।