বরিশালের সাতলার বিল বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলায় অবস্থিত একটি প্রাকৃতিক জলাভূমি। এটি শাপলা ফুলের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত, যা বর্ষাকালে ব্যাপকভাবে ফোটে এবং বিলে এক অপূর্ব দৃশ্যের সৃষ্টি করে। এটি লাল শাপলার রাজ্য, সাতলা নামে পরিচিত।সাতলার বিলের জীববৈচিত্র্য ও উল্লেখযোগ্য, এখানে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, পাখি এবং জলজ প্রাণীর বাসস্থান রয়েছে।
সাতলার বিলের (satlar beel)শাপলা ফুলের দৃশ্য সত্যিই মনোমুগ্ধকর। বর্ষার মৌসুমে, যখন বিলে পানি জমে, তখন শাপলা ফুলগুলি পুরো বিল জুড়ে ফোটে এবং বিলে এক অদ্ভুত সৌন্দর্য সৃষ্টি করে। এই সময়ে, স্থানীয় লোকজন এবং পর্যটকরা বিলে নৌকায় করে ঘুরতে যান এবং শাপলা ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করেন।সাতলার বিল সবচেয়ে বিখ্যাত শাপলা ফুলের জন্য। বর্ষাকালে, বিলের পানি ফুলে ফুলে ভরে যায় যা দেখতে অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর।
শাপলা ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম Nymphaea nouchali। এটি এক ধরনের জলজ উদ্ভিদ, যা পানির উপর ভাসমান অবস্থায় ফুল ফোটে।
১। রং ও প্রকার:শাপলা ফুল সাধারণত সাদা ও লাল রঙের হয়। সাদা শাপলা (সাদা শাপলা বা সাদা জলকুমুদ) এবং লাল শাপলা (লাল শাপলা বা রক্তশাপলা) সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এদের মধ্যে লাল শাপলা বিরল এবং বিশেষ আকর্ষণীয়।
২।আকার ও গঠন: শাপলা ফুল সাধারণত চওড়া পাপড়ি দিয়ে গঠিত, যা পানির উপরে ভাসমান থাকে। প্রতিটি ফুলের কেন্দ্রে হলুদ রঙের পরাগ থাকে, যা ফুলটিকে আরও মনোমুগ্ধকর করে তোলে।
৩। পানির সাথে সম্পর্ক: শাপলা ফুল সাধারণত স্থির বা ধীরগতি সম্পন্ন পানিতে জন্মে। এটি এমন জায়গায় ভালোভাবে ফোটে, যেখানে পানির গভীরতা মাঝারি থেকে কম এবং পানিতে পর্যাপ্ত সূর্যালোক পাওয়া যায়। সালার বিলের মতো বিলগুলোতে বর্ষাকালে এই ফুল প্রচুর পরিমাণে ফোটে, যা বিলে মনোরম দৃশ্য তৈরি করে।
শাপলা ফুল শুধুমাত্র প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রতীক নয়, এটি স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রার সাথেও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বাংলাদেশের অনেক অঞ্চলে শাপলা ফুল খাদ্য হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। শাপলার কাণ্ড ও মূল “শালুক” নামেও পরিচিত, যা সেদ্ধ করে খাওয়া হয়। এটি পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবেও বিবেচিত।
শাপলা ফুল বাংলাদেশের জলজ পরিবেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি জলাশয়ের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং জলজ জীববৈচিত্র্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বাসস্থান সরবরাহ করে। শাপলা ফুলের উপস্থিতি পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ায় এবং এটি জলজ প্রাণীদের জন্য একটি সুরক্ষিত আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করে।
সালার বিলের শাপলা ফুল দেখতে প্রতি বছর প্রচুর পর্যটক এখানে আসেন। এটি স্থানীয় অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। বিলের শাপলা ফুলকে কেন্দ্র করে স্থানীয় মানুষদের জীবিকাও গড়ে উঠেছে, যেমন নৌকা ভাড়া দেওয়া, শাপলা সংগ্রহ ও বিক্রি করা ইত্যাদি।
১।বাসে: ঢাকার সায়েদাবাদ বা গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে সরাসরি বরিশালগামী বাসে উঠতে হবে।
২।লঞ্চে: সদরঘাট থেকে সরাসরি বরিশালগামী লঞ্চে উঠতে হবে। বরিশাল নদীবন্দর পৌঁছাতে প্রায় ৮-১০ ঘণ্টা সময় লাগে। বরিশাল শহরে পৌঁছে, স্থানীয় পরিবহন (অটোরিকশা বা লোকাল বাস) ব্যবহার করে উজিরপুর যেতে হবে। উজিরপুর থেকে সাতলা যাওয়ার জন্য স্থানীয় পরিবহন বা রিকশা ব্যবহার করা যায়।
১।বাসে বা মাইক্রোবাসে: · বরিশাল শহর থেকে উজিরপুরগামী বাস বা মাইক্রোবাসে উঠতে হবে। উজিরপুর উপজেলা সদর থেকে সাতলা খুব কাছেই অবস্থিত।
২।অটোরিকশা বা মোটরবাইকে: বরিশাল শহর থেকে সরাসরি অটোরিকশা বা মোটরবাইকে করে সাতলা যাওয়া সম্ভব। এটি প্রায় ২০-২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং রাস্তাটি সরাসরি।
বরিশাল সদরে বেশ কিছু উন্নতমানের হোটেল রয়েছে যেখানে থাকা, খাবার এবং অন্যান্য সুবিধা রয়েছে। এখানে কিছু জনপ্রিয় হোটেলের তালিকা:
১।Hotel Grand Park-বেলস পার্ক লেকের পাশে অবস্থিত, এটি আন্তর্জাতিক মানের সুবিধাসম্পন্ন হোটেল। এখানে পার্ক ভিউ সহ বিভিন্ন ধরনের রুম ও সুইট রয়েছে।
২।Hotel Sedona-সদর রোডে অবস্থিত এই হোটেলটি চাইনিজ এবং বাংলাদেশি খাবারের পাশাপাশি ২৩২০ বর্গফুটের কনফারেন্স রুমের সুবিধা দেয়।।
৩।Rich Mart Rest House-লঞ্চ ঘাটের কাছে অবস্থিত এই রেস্ট হাউসে আধুনিক সুবিধাসহ সিঙ্গেল থেকে ফ্যামিলি স্যুট পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের রুম পাওয়া যায়।
৪।Hotel Arena-সদর রোডে অবস্থিত হোটেল এ রান্নাঘরের সুবিধাসহ আধুনিক সজ্জা ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুম রয়েছে, যা আরামদায়ক পরিবেশে থাকার জন্য উপযোগী।
৫।Hotel Athena Internationa-কাটপট্টি রোডে অবস্থিত এই হোটেলে ফ্রি সকালের নাস্তা, ওয়াই-ফাই, এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সুবিধা প্রদান করে।
৬।Hotel Charu Residential-বান্দ রোডে অবস্থিত এই হোটেলটি কক্ষের শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ এবং বিনামূল্যে সকালের নাস্তার সুবিধা প্রদান করে।
১।জাফরান রেস্টুরেন্ট – বারিশালের অন্যতম জনপ্রিয় রেস্টুরেন্ট, যা চাইনিজ এবং ইন্ডিয়ান খাবারের জন্য প্রসিদ্ধ।
২।তাওয়া রেস্টুরেন্ট – স্থানীয় খাবার যেমন মাছ, ভর্তা, ও ভাতের জন্য বিখ্যাত।
৩।হান্ডি করাই – মাটন ডিশের জন্য বিশেষভাবে সুপরিচিত।
৪।ধানসিড়ি রেস্টুরা – স্থানীয় খাবারের একটি জনপ্রিয় রেস্টুরেন্ট।বরিশাল সদরে ভালমানের রসগোল্লা পাওয়া যায়।আবশ্যই নিতাই ও হকের রসগোল্লা খাবেন।
বরিশাল ঘুরতে আসলে,ভিমরুলি পেয়ারা বাগান ও ভাসমান পেয়ারা বাজার,ঝালকাঠি, বরিশাল।Vasoman Peyara Bazar একবারের জন্য হলেও ঘুরে যাবেন।
বাংলাদেশের পাহাড়ি সৌন্দর্যের কথা বললেই যে কয়টি স্থানের নাম সবার আগে মনে পড়ে, তার মধ্যে…
ঢাকা শহরের মিরপুরে অবস্থিত প্রাণ-প্রকৃতির মিলনমেলা বাংলাদেশের জাতীয় চিড়িয়াখানা (Bangladesh National Zoo) , যা আমাদের…
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ভোলার স্বাধীনতা জাদুঘর(freedom museum bhola)। ভোলা…
ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলায় অবস্থিত একটি দৃষ্টিনন্দন পর্যটন আকর্ষণ জ্যাকব টাওয়ার(jakob tower), যা "বাংলার আইফেল…
বাংলাদেশের একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর দ্বীপ চর কুকরি মুকরি(chor kukri mukri)এলাকা, যা ভোলা জেলার দক্ষিণে…
বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলার নিমতলা গ্রামের পাশে অবস্থিত একটি মনোরম ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর…
View Comments