বরিশাল বিভাগ

শেরে বাংলা স্মৃতি জাদুঘর  Sher e bangla Memorial Museum

শেরে বাংলা স্মৃতি জাদুঘর  Sher e bangla Memorial Museum  জেলা থেকে ২৪ কিঃমি দূরে বানারীপড়া উপজেলার চাখার ইউনিয়নে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের  বসতভিটার   ২৭ একার জমিতে নি র্মিত হয়েছে। শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন, কৃষক-প্রজা আন্দোলন, এবং গণমানুষের অধিকার রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। এই জাদুঘর তার জীবনের আদর্শ ও কাজের সঙ্গে পরবর্তী প্রজন্মকে পরিচিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। বরিশালেই তিনি জন্মগ্রহণ করেন এবং এখানকার মানুষদের সাথে তার নিবিড় সম্পর্ক ছিল। সেই কারণেই বরিশালে এই স্মৃতি জাদুঘরটি স্থাপন করা হয়েছে।

sher e bangla memorial museumbarisal

জাদুঘরের প্রধান ফটকের সামনে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের একটি বৃহৎ ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে। ভাস্কর্যটিতে শেরে বাংলাকে একটি নেতৃত্বস্থানীয় অবস্থায় দেখানো হয়েছে, যা তার রাজনৈতিক জীবন ও কৃষক-প্রজা আন্দোলনের প্রতি তার প্রতিশ্রুতির প্রতীক। জাদুঘরের আশেপাশের উদ্যান এবং খোলা জায়গায় আরও কিছু ভাস্কর্য রয়েছে, যা শেরে বাংলার জীবনের সাধারণ দিকগুলোকে প্রতিফলিত করে। তার শিক্ষা, সংস্কৃতি, এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে তার নিবিড় সম্পর্ককে তুলে ধরার জন্য কিছু প্রতীকী ভাস্কর্যও রয়েছে। এগুলো জাদুঘরের প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে মিল রেখে স্থাপন করা হয়েছে।

sher e bangla memorial museumbarisal

শেরে বাংলা স্মৃতি জাদুঘর Sher e bangla Memorial Museum প্রধান উপাদানসমূহ:

১.শেরে বাংলার ব্যবহৃত জিনিসপত্র, যেমন তার কোট, টুপি, লাঠি, এবং তার ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কিত অনেক গুরুত্বপূর্ণ জিনিস এখানে রাখা হয়েছে।

২.শেরে বাংলার লেখা বই, তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের দলিল এবং ঐতিহাসিক নানা ঘটনার চিঠিপত্র এখানে সংরক্ষিত রয়েছে। এগুলো থেকে তার চিন্তাভাবনা ও আদর্শ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

৩.শেরে বাংলার দেয়া ভাষণ ও অন্যান্য অডিও-ভিজ্যুয়াল মাধ্যমের সাহায্যে তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার ওপর আলোকপাত করা হয়েছে।

৪.জাদুঘরের সাথে একটি গ্রন্থাগার সংযুক্ত, যেখানে শেরে বাংলার ওপর গবেষণার জন্য অনেক দালিলিক প্রমাণ ও বই পাওয়া যায়।

 

শেরে বাংলা স্মৃতি জাদুঘরের সময়সূচী

(১এপ্রিল-৩০সেপ্টেম্বর)সকাল ১০.০০ থেকে বিকাল ৬.০০টা পর্যন্ত জাদুঘর খোলা থাকে।দুপুর ১.০০থেকে ১.৩০ পর্যন্ত বিরতি থাকে।(১ আক্ট-৩১ মার্চ)সকাল ৯.০০ থেকে বিকাল ৫.০০টা পর্যন্ত জাদুঘর খোলা থাকে।দুপুর ১.০০থেকে ১.৩০ পর্যন্ত বিরতি থাকে।  সোমবার ০১.৩০ থেকে বিকাল ৫.০০টা পর্যন্ত জাদুঘর খোলা থাকে।শুক্রবার ১২.৩০ থেকে ২.৩০ পর্যন্ত বিরতি থাকে। রবিবার  ছুটির দিন  ।সরকারী যেকোন  বিশেষ দিন  খোলা থাকে।

জাদুঘরের প্রবেশমূল্য

জনপ্রতি ১০ টাকা,বাচ্চাদের জন্য৫ টাকা ও ৫বছরের  নিচে বচ্চাদের জন্য বিনামূল্যে প্রবেশ সু্যোগ রয়েছে।এছাড়া সার্কভুক্ত দেশের দর্শনার্থীদের জন্য ২৫ টাকা।বিদেশী দর্শনার্থীদের জন্য ১০০টাকা ।

sher e bangla memorial museumbarisal

ঢাকা থেকে কিভাবে যাবেনঃ

ঢাকা থেকে বরিশালে অবস্থিত শেরে বাংলা স্মৃতি জাদুঘর যেতে হলে আপনি কয়েকটি ভিন্ন ভ্রমণ পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন, যেমন: বাস, লঞ্চ, বা বিমান।

১ .বাসে করে ভ্রমণ:   ঢাকা থেকে বরিশাল সরাসরি বাস সার্ভিস চালু রয়েছে। আপনি গাবতলী বা সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে বরিশালগামী বাস ধরতে পারেন। বেশ কিছু বাস সার্ভিস যেমন এস.আলম, ঈগল, কিংবা সুন্দরবন বরিশাল পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করে।বাসে ভ্রমণের সময় সাধারণত ৬-৭ ঘণ্টা ।

২.লঞ্চে করে ভ্রমণ:ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে সরাসরি বরিশালগামী বেশ কিছু লঞ্চ চলাচল করে। এটি বেশ জনপ্রিয় একটি ভ্রমণ পদ্ধতি।রাতে ঢাকা থেকে লঞ্চ ছাড়ে এবং ভোরে বরিশালে পৌঁছে। সময় লাগে প্রায় ৮-১০ ঘণ্টা।

৩.বিমানে ভ্রমণ:আপনি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বরিশালের উদ্দেশ্যে সরাসরি ফ্লাইট নিতে পারেন।ফ্লাইটের মাধ্যমে বরিশাল যেতে সাধারণত ৩০-৪০ মিনিট সময় লাগে।

sher e bangla memorial museumbarisal

স্থানীয় গাইড ও দিকনির্দেশনা:

বরিশালে পৌঁছার পর আপনি স্থানীয় পরিবহন যেমন রিকশা বা সিএনজি ব্যবহার করে সহজেই শেরে বাংলা স্মৃতি জাদুঘর এ পৌঁছতে পারবেন। বরিশালের বকুলতলা এলাকায় অবস্থিত এই জাদুঘরটি শহরের কেন্দ্রস্থলে হওয়ায় যাতায়াত বেশ সহজ।

কোথায় থাকবেন

চাখার থেকে বরিশাল সদর খুব কাছে, তাই শেরে বাংলা স্মৃতি জাদুঘর ভ্রমন শেষ করে বরিশাল সদরে পৌছে বাজেট আনুযায়ী হোটেল বুকিং করতে পারেন।

১।হোটেল গ্র্যান্ড পার্ক বরিশালঃ শহরের অন্যতম ভালো মানের একটি হোটেল, আধুনিক সুযোগ-সুবিধা এবং ভালো রেস্টুরেন্ট পরিষেবা রয়েছে।

২।হোটেল এথিনাঃ সাশ্রয়ী এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার জন্য পরিচিত, যেখানে আরামদায়ক কক্ষ এবং রুম সার্ভিস আছে।

৩।হোটেল আল-আরাঃএটি একটি জনপ্রিয় এবং সাশ্রয়ী মূল্যের হোটেল, যা শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত।

৪।হোটেল রয়েল টাওয়ারঃভালো মানের কক্ষ এবং সেবা দিয়ে পরিচিত, শহরের মাঝামাঝি স্থানে থাকা যায়।

৫।হোটেল সিটি ইনঃএটি শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এবং ভাল মানের থাকার ব্যবস্থা ও পরিষেবা প্রদান করে।

কোথায় খাবেনঃ

চাখারে সাধারন মানের হোটেলে দেশী খাবার  খেতে পারেন।

১।জাফরান রেস্টুরেন্ট-বারিশালের অন্যতম জনপ্রিয় রেস্টুরেন্ট, যা চাইনিজ এবং ইন্ডিয়ান খাবারের জন্য প্রসিদ্ধ।

২।তাওয়া রেস্টুরেন্ট-স্থানীয় খাবার যেমন মাছ, ভর্তা, ও ভাতের জন্য বিখ্যাত।

৩।হান্ডি করাই -মাটন ডিশের জন্য বিশেষভাবে সুপরিচিত।

৪।ধানসিড়ি রেস্টুরা -স্থানীয় খাবারের একটি জনপ্রিয় রেস্টুরেন্ট।

বরিশালে ভাল মানের দধি ও রসগোল্লা পাওয়া যায়। দধির মান অনুযায়ী গৌরনদী, দধিঘরের দই বেশ উন্নত। আর রসগোল্লার স্বাদ এবং মানে নিতাই,বলাই ও মেহেন্দিগঞ্জ বিখ্যাত।

সর্বশেষে, বরিশালে আসলে অবশ্যই  ইলিশ মাছ খেতে ভুলবেন না।

বরিশালের শেরে বাংলা স্মৃতি জাদুঘর ঘুরতে আসলে, তিনশ বছরের পুরনো কলসকাঠির জামিদার বাড়ি একবারের জন্য হলেও ঘুরে যাবেন।

Admin sara

View Comments

Recent Posts

বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর Bangladesh National Museum

বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর (Bangladesh National Museum) দেশের সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ জাদুঘর। এটি শুধুমাত্র একটি…

3 weeks ago

মেঘে ঢাকা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিলগিরিNilgiri

বাংলাদেশের পাহাড়ি সৌন্দর্যের কথা বললেই যে কয়টি স্থানের নাম সবার আগে মনে পড়ে, তার মধ্যে…

4 months ago

প্রাণ-প্রকৃতির মিলনমেলা বাংলাদেশের জাতীয় চিড়িয়াখানা

ঢাকা শহরের মিরপুরে অবস্থিত প্রাণ-প্রকৃতির  মিলনমেলা বাংলাদেশের জাতীয়  চিড়িয়াখানা (Bangladesh National Zoo) , যা আমাদের…

5 months ago

ঐতিহ্য সংরক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ভোলার স্বাধীনতা জাদুঘর

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র  freedom museum bholaস্বাধীনতা জাদুঘর। ভোলা জেলার…

6 months ago

দৃষ্টিনন্দন পর্যটন আকর্ষণ জ্যাকব টাওয়ার

ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলায় অবস্থিত একটি দৃষ্টিনন্দন পর্যটন আকর্ষণ জ্যাকব টাওয়ার(jakob tower), যা "বাংলার আইফেল…

6 months ago

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর দ্বীপ চর কুকরি মুকরি

বাংলাদেশের একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর দ্বীপ chor kukri mukri চর কুকরি মুকরি এলাকা, যা ভোলা…

6 months ago